পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষ কে

পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষ কে? তার একটি চিরন্তন অনুসন্ধান

পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষ কে? এই প্রশ্নটি হয়তো প্রতিটি চিন্তাশীল মানুষ তার জীবনে অন্তত একবার নিজেকে করেছেন। এর কোনো সরল উত্তর নেই, কারণ ‘ভালো মানুষ’ হওয়ার ধারণাটি সংস্কৃতি, ধর্ম, ব্যক্তিগত মূল্যবোধ এবং সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তিত হয়। তবে, যদি ইতিহাসের পাতা ওল্টানো যায়, তবে কিছু ব্যক্তিত্বের নাম সামনে আসে যাদের মানবিকতা, নেতৃত্ব এবং পৃথিবীর উপর প্রভাব তাদের ‘শ্রেষ্ঠ’ মানুষের আসনে বসিয়েছে।

যার বিশ্বজুড়ে এক নাম: হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)

বিভিন্ন জরিপ, ইতিহাসবিদদের গবেষণা এবং বহু মানুষের হৃদয়ের মাপে যে নামটি বারবার শীর্ষে উঠে আসে, তিনি হলেন হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)।

তিনি ছিলেন একজন ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা, একজন ধর্মীয় নেতা, একজন সফল রাষ্ট্রনায়ক, একজন ন্যায়পরায়ণ বিচারক, একজন যত্নশীল স্বামী এবং একজন আদর্শ পিতা। একজন মানুষ হিসেবে তাঁর জীবনের প্রতিটি দিকই ছিল অনুসরণযোগ্য। যেটা আমাদের সকলের অনুসরণ করা দরকার।

জানুন: আমি ও আমার পরিবারের পরিচয় নিয়ে কিছু প্রশ্ন?

তাঁকে শ্রেষ্ঠ বলা হয় কেন?

কারণ ইতিহাসবিদ এবং মনীষীরা তাঁনাকে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে গণ্য করেছেন। এর কয়েকটি প্রধান কারণ হলো:

১. অতুলনীয় চারিত্রিক মাধুর্য: তাঁনার সততা, বিশ্বস্ততা, দয়া, ক্ষমা ও সহনশীলতা ছিল কিংবদন্তী। মক্কার লোকেরা তাঁকে উপাধি দিয়েছিল ‘আল-আমিন’ বা (বিশ্বস্ত)। এমনকি তাঁর ঘোর শত্রুরাও তাঁর সততার প্রশংসা করত।

২. বিপ্লবী সামাজিক সংস্কার: যে সমাজে কন্যা সন্তানকে জীবন্ত কবর বা দাফন দেওয়া হতো, তিনি এসে সেই সমাজে নারী ও দুর্বলদের জন্য অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তিনি বর্ণ, গোত্র ও অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করে এক সাম্যবাদী সমাজ তৈরি করেছিলেন। যেটা আজ পর্যন্ত দ্বিতীয় কেউ করতে পারেনি।

৩. ধর্ম ও রাষ্ট্রনায়কের বিরল সমন্বয়: তিনি একাধারে ইসলাম ধর্মের ভিত্তি স্থাপন করেন এবং একটি সফল রাষ্ট্রের নেতৃত্ব দেন। ধর্মীয় ও জাগতিক, উভয় ক্ষেত্রেই তাঁর সাফল্য ইতিহাসে বিরল।

৪. ক্ষমা ও করুণার আদর্শ: মক্কা বিজয়ের পর যখন তাঁনার কাছে প্রতিশোধ নেওয়ার পূর্ণ সুযোগ ছিল, তখন তিনি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে পৃথিবীতে ক্ষমার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। যেটা এখনকার সময় কেউ করে না বা এর আগেও কেউ করেনি।

৫. মাইকেল হার্টের তালিকা: আমেরিকান জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও ইতিহাসবিদ মাইকেল এইচ. হার্ট তাঁর ‘দি হান্ড্রেড: এ র‍্যাংকিং অব দ্য মোস্ট ইনফ্লুয়েনশিয়াল পারসনস ইন হিস্টরি’ গ্রন্থে হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-কে ইতিহাসের সর্বাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব হিসেবে এক নম্বরে স্থান দিয়েছেন। হার্ট যুক্তি দেন, মুহাম্মদ (সাঃ) ধর্মীয় ও জাগতিক, উভয় ক্ষেত্রেই যে বিশাল পরিবর্তন এনেছেন, তা তাঁনাকে এই স্থানে বসিয়েছে।

ভালো মানুষের সার্বজনীন মানদণ্ড

যদিও হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-কে অনেকে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ মানব হিসেবে দেখেন, কারণ ভালো মানুষ হওয়ার ধারণাটি কোনো একক নামের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। পৃথিবীর সব ধর্ম ও সংস্কৃতির মানুষের মধ্যে কিছু সাধারণ গুণাবলী রয়েছে যা একজন মানুষকে ‘ভালো’ করে তোলে।

যেমন: হাদিসের ভাষ্যমতে, “মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠ সে, যে মানুষের বেশি বেশি উপকার করে।”

এই বক্তব্যের ভিত্তিতে, শ্রেষ্ঠ মানুষ হতে হলে যে গুণগুলো অপরিহার্য বা প্রয়জন তার কিছু সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিচে দিলাম।

  • ১. দয়া ও সহানুভূতি: যে ব্যক্তি অন্যের কষ্ট বোঝেন এবং তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসেন।
  • ২. ন্যায়পরায়ণতা: যিনি নিজের ও অন্যের জন্য ন্যায় প্রতিষ্ঠা করেন এবং সত্যের পক্ষে থাকেন।
  • ৩. সেবা ও উপকার: যিনি নিস্বার্থে ঊর্ধ্বে উঠে মানুষের কল্যাণে কাজ করেন।
  • ৪. সততা ও বিশ্বস্ততা: যিনি সর্বাবস্থায় সত্যবাদী ও প্রতিশ্রুতি রক্ষাকারী।
  • ৫. ধৈর্য ও সহনশীলতা: যিনি কঠিন পরিস্থিতিতেও শান্ত থাকেন এবং অন্যের ভুল ক্ষমা করতে পারেন। তিনি একজন ভালো মানুষ।

জানুন: আগামী দিনে AI এর লক্ষ্য কী?

উপসংহার:

‘পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো মানুষ কে’ এই প্রশ্নের উত্তর একরকম স্থির হলেও, আমাদের মনে রাখতে হবে যে শ্রেষ্ঠত্ব একটি চলমান প্রক্রিয়া। যেটি ইতিহাসে মহান ব্যক্তিত্বরা পথ দেখিয়েছেন, কিন্তু সেই পথে হাঁটার দায়িত্ব আমাদের।

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর জীবন আমাদের শেখায়, একজন মানুষ তাঁর জন্ম, জাতি বা সম্পদ দ্বারা নয়, বরং তাঁর চরিত্র, কাজ এবং মানবতার প্রতি তাঁর অবদান দ্বারা শ্রেষ্ঠ হয়ে ওঠেন। শ্রেষ্ঠ মানুষ তিনিই, যিনি তাঁর চারপাশের পৃথিবীকে একটু হলেও সুন্দর করে তোলেন। আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই একজন ‘সেরা মানুষ’ হওয়ার সুযোগ রয়েছে, যদি আমরা কেবল মানুষের উপকারে নিজেদের নিয়োজিত করতে পারি।

আরো পোস্ট পড়ুন :-

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।