পার্কসার্কাস স্টেশন

পার্ক সার্কাস স্টেশন: আপনার সুরক্ষার জন্য কিছু জরুরি নির্দেশিকা

কলকাতা শহরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন হলো পার্ক সার্কাস (Park Circus)। যেটা শিয়ালদহ মেইন লাইন, সার্কুলার রেল এবং লোকাল ট্রেন যাতায়াতের কেন্দ্রবিন্দু হওয়ায় এখানে সবসময়ই মানুষের ভিড় থাকে। তবে এই জনবহুল স্টেশনে ভ্রমণ বা যাতায়াত করার সময় আপনার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কিছু বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা অত্যন্ত জরুরি। কারণ এখানে সামান্য অসতর্কতাও কিন্তু বড় বিপদের কারণ হতে পারে।

তাই আমি আমার নিজেস্ব অভিজ্ঞতা থেকে জানাবো ট্রেন যাত্রায় কিংবা স্টেশনে থাকাকালীন কী কী নিয়ম মেনে চলবেন, তা নিচে আলোচনা করা হলো, কারণ এখানে দিনে দিনে চুরি ছিনতাই বেড়েছে:

চলন্ত ট্রেন ও ছিনতাইয়ের বিপদ থেকে সাবধান

আপনি যদি বালিগঞ্জ বা শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে উঠে থাকুন বা নামুন, ট্রেন ছাড়ার সময় থেকেই সতর্ক থাকুন। কারণ এই সময়টাতেই ছিনতাইকারীরা সক্রিয় হয়ে ওঠে।

গলার চেন, ব্যাগ বা মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে তারা চলন্ত ট্রেন থেকেই লাফ দিয়ে নেমে যেতে পারে। ‘রানিং ট্রেন’ থেকে লাফ দিতে এরা একেবারেই ভয় পায় না। তাই ট্রেন চলতে শুরু করলেই আপনার মূল্যবান জিনিসপত্রের দিকে বাড়তি নজর দিন বা সেগুলো ব্যাগের মধ্যে ঢুকিয়ে সেটিকে সামনের দিকে করে নিন ।

জানালার পাশে মোবাইল ব্যবহার নয়

ট্রেনে বসার সময় জানালার পাশে থাকলে নিজের সুরক্ষার কথা মাথায় রাখুন। তাই জানালার পাশে বসে ফোন টিপবেন না বা ব্লুটুথ ইয়ারফোন কানে দিয়ে অন্যমনস্ক হবেন না।

স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা ছিনতাইবাজরা মুহূর্তের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে আপনার জিনিসপত্র উধাও করে দিতে পারে। বিশেষত ট্রেন যখন ধীরে চলে বা স্টেশনে ঢোকে, তখন এই বিপদ আরও বাড়ে।

স্টেশনে অযথা ঘোরাঘুরি নয়

আপনার কোনো প্রয়োজন বা কাজ থাকলে, তা মিটিয়ে যত দ্রুত সম্ভব স্টেশন ছেড়ে বেরিয়ে যান।

অযথা ঘোরাঘুরি বা দাঁড়িয়ে থাকা বিপজ্জনক হতে পারে। কিছু অসামাজিক বা নেশাগ্রস্ত লোক, যাদেরকে “পাতাখোর” বলা হয়, তাদের সঙ্গে ঝামেলায় না জড়ানোই বুদ্ধিমানের কাজ। এরা মাঝেমাঝেই আপনার জন্য অচেনা বিপদ ডেকে আনে।

ওভারব্রিজ ও আড়াল জায়গা এড়িয়ে চলুন

স্টেশনের ওভারব্রিজ এবং দোকানের আড়ালে দাঁড়ানো থেকে বিরত থাকুন।

কারণ ওভারব্রিজের উপরে প্রায়শই নেশাগ্রস্তদের আড্ডা থাকে। তাই তাদের সঙ্গে কোনো ঝামেলায় না যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। কোনো ঝগড়া বা তর্কে না জড়িয়ে দ্রুত সেই জায়গা পার হয়ে যান।

জানুন: কলকাতা থেকে দীঘা যাত্রার খরচ ও ঘোরার টিপস।

ট্রেনে ওঠার সময় মূল্যবান জিনিস সুরক্ষিত রাখুন

ট্রেনে ওঠার সময় বা ভিড়ের মধ্যে মানিব্যাগ ও ফোন পকেটে না রেখে হাতে বা এমন জায়গায় রাখুন যেখানে আপনার নজর থাকবে।

পকেটে রাখলে বহু ক্ষেত্রেই সেগুলি পকেট মার হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অনেকেরই এই স্টেশনে প্রিয় ফোন বা মানিব্যাগের শেষ বিদায় হয়েছে! তাই ভিড়ে আপনি সচেতন থাকুন।

দোকানের খাবার-দাবার নিয়ে সতর্ক থাকুন

স্টেশনের দোকান থেকে খাবার-দাবার কেনার সময় সতর্ক থাকুন।

যদি খাবার খারাপ মনে হয়, তাহলে শান্তভাবে তার দাম মিটিয়ে চলে যান।

অপ্রয়োজনীয় ঝগড়া বা তর্ক-বিতর্ক আপনাকে বিপদে ফেলতে পারে। মনে রাখবেন, স্টেশনের পরিবেশ সবসময় আপনার অনুকূলে নাও থাকতে পারে।

একা বাথরুমে যাওয়া এড়িয়ে চলুন

বিশেষ করে টিকিট কাউন্টারের পেছনের বাথরুমে একা যাওয়া বিপজ্জনক হতে পারে।

একা গেলে সেখানে যেকোনো দুষ্কৃতীর শিকার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কারণ আমার এক বন্ধুর একবার সেখানেই খুর দেখিয়ে পকেট খালি করেছিল এক পাতাখোর। একান্ত প্রয়োজন হলে পরিচিত কাউকে সঙ্গে নিন বা আশেপাশে লোক রয়েছে এমন সময় বাথরুমে যান।

ছবি বা ভিডিও তোলা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ

পার্ক সার্কাস স্টেশনে মোবাইল দিয়ে ছবি তোলা বা ভিডিও করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।

তাই আপনি যদি না জেনে যদি আপনি এই কাজটি করেন, তাহলে আপনি বিপদ ডেকে আনতে পারেন এবং আইনি জটিলতায় পড়তে পারেন। স্টেশনের পরিকাঠামো এবং নিরাপত্তার কারণে এই নিয়ম মেনে চলা জরুরি।

দ্রুত চেকলিস্ট আপনার জন্য

  • ট্রেন ছাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাগ সামনে রাখুন।
  • জানালার পাশে ফোন ব্যবহার করবেন না।
  • স্টেশনেই অকারণে ঘোরাঘুরি করবেন না স্টেশন থেকে দ্রুত চলে যান।
  • ওভারব্রিজ/দোকানের আড়ালে দাঁড়াবেন না।
  • ব্যাগ পিছনে রাখবেন না, হাতে বা সামনে রাখুন।
  • সন্দেহ হলে খাবার-দাবারের ঝগড়ায় জড়াবেন না।
  • বাথরুম একা যাওয়ার চিন্তা করবেন না।
  • স্টেশন এর ছবি বা ভিডিও তুলবেন না এটি নিষেধ আছে।

কিছু কার্যকর টিপস

  1. সম্ভব হলে ভিড়ের মধ্যে স্নিগ্ধ ও সতর্ক থাকুন, অতিরিক্ত দামি গহনা বা ফোন প্রকাশ্যে রাখবেন না।
  2. জরুরি ফোন নম্বর দ্রুত খুঁজে রাখুন। (নিরাপত্তার জন্য লোকাল পুলিশ কন্ট্রোল রুম নম্বর নিজের ফোনে সেভ করে রাখুন)।
  3. সন্ধ্যা–রাত হলে স্টেশনে অনুমোদিত নিরাপত্তা প্রত্যক্ষ থাকলে তাদের সাহায্য নিন।
  4. যদি চোর-চক্র শনাক্ত করেন, নিজে লড়াই করবেন না, যতটা দ্রুত সম্ভব নিরাপদ দূরত্বে থাকা মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করুন বা স্টেশন পুলিশকে জানান।

শেষ কথা:

পার্কসার্কাসের মতো ব্যস্ত স্টেশনগুলোতে সতর্কতা এবং সচেতনতা আপনাকে বিপদে পড়া থেকে রক্ষা করতে পারে। তাই আপনি এই নিয়মগুলো মনে রাখুন, প্রয়োজনে অন্যকেও জানাবেন। কারণ ছোট্ট সতর্কতা বড় বিপদ থেকে বাঁচায়। নিরাপদে ভ্রমণ করুন, সচেতন থাকুন, এবং আপনার পরিবার ও বন্ধুবান্ধবকে এই নিয়মগুলো শেয়ার করুন এবং তাদের এই সতর্কতা বিষয়ে জানিয়ে দিন।

জানুন: বাচ্চা চুরি প্রতারণা থেকে সতর্ক থাকার উপায়।

আরো পোস্ট পড়ুন :-

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।