কলকাতা থেকে দীঘা যাত্রার খরচ ও দিঘায় ঘোরার টিপস জানুন

২০২৪ এ কলকাতা থেকে দীঘা যাত্রার খরচ ও দিঘায় ঘোরার টিপস জানুন

আসসালামু আলাইকুম, বন্ধুরা আপনাদের তরিকুল বাঙালি ওয়েবসাইটে স্বাগতম। আজকে আমরা কথা বলব কলকাতা থেকে দীঘা যাত্রার খরচদীঘাতে ঘুরবার কিছু টিপস, সাথে বাসের টিকিট, ঘর ভাড়া, সময়, রোড ট্রিপ, দূরত্ব ও আরো অন্যান্য বিষয়ে।

সুতরাং, আপনি যদি কলকাতা থেকে দীঘা যাওয়ার প্লান করে থাকেন, কিংবা দীঘাতে প্রথম বার যাবেন বলে ভাচ্ছেন। তাহলে এই নিবন্ধনটি সম্পূর্ণ পড়ে নিন। আশা করি এই নিবন্ধনটি আপনার কলকাতা থেকে দীঘা যাত্রার সম্পর্কে জানতে অনেক সাহায্য করবে।

তাই চলুন দেরি না করে জেনে নিই আমরা সেই সমস্ত বিষয় গুলি।

কলকাতা থেকে দীঘা যাত্রার বিবরণ

আপনি যদি কলকাতা থেকে দীঘা যাত্রা করতে চান। তাহলে সেক্ষেত্রে সবার প্রথমে আপনাকে কলকাতা গড়িয়া, বারাসাত, ধর্মতলা বা এসপ্ল্যানেড, থেকে বাস ধরতে হবে। অথবা আপনি হাওড়া স্টেশন থেকে ট্রেন ধরে যেতে পারবেন।

তবে আপনি যদি বাসে যান সেক্ষেত্রে আপনাকে ভিন্ন খরচ হতে পারে। যেমন; সরকারি বাসে ১৫০ টাকা টিকিটের মূল্য, এবং এসি বাসে ৩০০ টাকা টিকিটের মূল্য। আর আপনি যদি ট্রেনে যেতে চান তাহলে স্লিপার টিকিট মাত্র ৯০ টাকাতে পেয়ে যাবেন। তবে ট্রেনের সংখ্যা খুবই কম। কারণ দিনে শুধুমাত্র দুইটি ট্রেন চলাচল করে। সেই কারণে বাসে যাওয়াটাই আমার ঠিক বলে মনে হয়। কারণ আপনি কলকাতা থেকে দীঘা যেতে আনলিমিটেড বাস পেয়ে যাবেন। সেকারণে আপনার যখন খুশি আপনি সেই সময়ের যেতে পারবেন।

আর কলকাতা থেকে বাসে দীঘা যেতে সময় লাগে ৪ ঘন্টা ৩০ মিনিট। সেখানে ট্রেনে যেতে সময় লাগে ৩ ঘন্টা ২৫ মিনিট।

দীঘা পৌঁছানোর পর আপনাকে একটি ঘর বা হোটেল ভাড়া নিতে হবে, থাকার জন্য। যেটা শুধুমাত্র ৪০০ টাকা প্রতিদিন থেকে শুরু। এর উপরে আপনি ৪০০০ কিংবা ১০ হাজার টাকা প্রতিদিন ভাড়া হিসেবে হোটেল পেয়ে যাবেন, একদম দিঘার বিচের ধারে। আর ৪০০ টাকা রুমগুলো নিতে গেলে আপনাকে একটু সময় লাগিয়ে খোঁজাখুঁজি করতে হবে। অন্যথায় আপনি ওল্ড দিঘায় কিংবা নিউ দীঘায় রাস্তার ওপর সাইডে যে হোটেলগুলো উপলব্ধ আছে। সেখানে খোঁজাখুঁজি করলে অনেক অল্প টাকাতে থাকার জন্য হোটেল পেয়ে যাবেন।

তবে হোটেলে থাকতে গেলে আপনাকে অবশ্যই আপনার অরজিনাল আধার কার্ড, সাথে তার জেরক্স নিতে হবে।

তারপর সেখানে খাওয়া-দাওয়ার জন্য আপনি অনেক হোটেল কিংবা রেস্টুরেন্ট পেয়ে যাবেন। যেখানে ৬০ টাকায় পেট ফুরন সবজি ভাত পেয়ে যাবেন। আর মাছ, মাংস খেলে সেগুলো তাদের নির্ধারিত দামের উপরে চার্জ করা হবে।

তবে আপনি চাইলে আপনি যে হোটেলে থাকবেন সেই হোটেলের রেস্টুরেন্ট থেকেও খেতে পারেন। কিংবা আপনি অন্য জায়গা থেকে মাছ মাংস কিনে এনে সেই হোটেলের রেস্টুরেন্টের লোকেদের কাছে দিলে তারা আপনার কাছ থেকে ১০০ থেকে ২০০ টাকা নিয়ে সেটি ভালোভাবে রান্না করে দেবে।

জানুন : পশ্চিমবঙ্গের জেলা কয়টি ও নাম কি কি?

এরপর আপনি দীঘায় বিভিন্ন বিচ। যেমন; ওল্ড দিঘার বিচ, মোহনা, নিউ দিঘার বিচ, উদয়পুর বিচ, তালসারি বিচ, লাল কাঁকড়া বিচ, ও আরো অন্যান্য বিচে ঘোরাঘুরি করতে হলে দিঘা থেকে টোটো ধরে আপনি সেগুলো ঘুরতে পারবেন। তবে টোটো তে ঘুরতে যাওয়ার আগে, অবশ্যই কোন বিচে ঘুরতে গেলে কত টাকা ভাড়া লাগে। সেটি তাদের ভাড়ার চাট দেখে জেনে নেবেন। অন্যথায় আপনি সরাসরি গেলে ঠকে যেতে পারেন।

১. নিউ দিঘার বিচ

new digha

২. ওল্ড দিঘার বিচ

old digha

৩. উদয়পুর বিচ

উদয়পুর বিচ

৪. মোহনা বিচ

মোহনা বিচ

৫. মোহনা মাছ বাজার

মোহনা মাছ বাজার

৬. তালসারি বিচ ও লাল কাঁকড়া

তালসারি বিচ
লাল কাঁকড়া

এই সমস্ত বিচে ঘোরার জন্য আপনাকে কিছু সময় নির্ধারণ করে যেতে হবে। তাহলে আপনি সেখানকার মজা নিতে পারবেন। যেমন; মোহনায় যেতে গেলে সকাল ছয়টা থেকে সকাল ১১ টার মধ্যে যেতে হবে। আর উদয়পুর, তালসারি, ও লাল কাঁকড়া বীচে, যেতে গেলে বিকেল চারটের পরে যেতে হবে। তাহলে আপনি সেখানে গিয়ে মজা করতে পারবেন। আর নিউ দীঘা এবং ওল্ড দিঘা বিচে আপনি যখন খুশি তখন যেতে পারবেন। তবে একটি কথা মনে রাখবেন, পাথরের উপরে জলের স্তর থাকলে দিঘাতে না নামাটাই ভালো হবে ,কারণ দীঘার ঢেউয়ে আপনার শরীর ক্ষত হতে পারে, পাথরে ধাক্কা লেগে।

এছাড়া অন্য সব বিচের থেকে দীঘা বিচে আপনি ঘোড়া, প্যারাসুট, স্পিডবোট, চাপতে পারবেন অল্প কিছু টাকার বিনিময়ে।

আপনার দীঘা ঘোরা সম্পূর্ণ হয়ে গেলে, বাড়ি ফিরবার সময় দীঘা থেকে কলকাতায় আসতে আগে থেকে টিকিট কাটবে না। যেকোনো বাস স্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে থাকবেন। এবং সেখান থেকে যে বাসগুলো যাবে তারাই দীঘা থেকে কলকাতায় যাত্রী নিয়ে আসার জন্য খোঁজ করে থাকে। সেখানে আপনি একটু দামাদামি করলে এসি বাসে টিকিট মাত্র ২০০ টাকাতে পেয়ে যেতে পারেন। কিন্তু সরকারি বাস ও ট্রেনের টিকিটের মূল্য একই থাকবে।

এইভাবে আপনি খুব সহজেই কলকাতা থেকে দীঘা ঘুরে আসতে পারবেন খুবই অল্প খরচে মাধ্যমে।

কলকাতা থেকে দীঘা বাসের ভাড়া কত?

কলকাতা থেকে দীঘা বাসের ভাড়া এইমাত্র ১৫০ থেকে ৩৫০ টাকা। সরকারি বাসগুলোর ভাড়া ১৫০ টাকা এবং এসি বাসের ভাড়া ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা।

দীঘা যেতে কত সময় লাগে?

দীঘা যেতে বাসে করে সময় লাগে চার ঘন্টা ত্রিশ মিনিট (৪.৩০ মিনিট)। আর ট্রেনে করে সময় লাগে তিন ঘন্টা ২৫ মিনিট।

কলকাতা থেকে দীঘা ট্রেন কয়টি?

কলকাতা হাওড়া স্টেশন থেকে দীঘা যাত্রার জন্য মাত্র দুইটি ট্রেন উপলব্ধ আছে। একটি সময় সকাল ছয়টা ৪৫ মিনিটে। যেটা যেতে সময় নেবে তিন ঘন্টা কুড়ি মিনিট এবং সেটি দিঘাতে পৌঁছাবে সকাল দশটা পাঁচ মিনিটে। আর দ্বিতীয় ট্রেন কান্ডারী এক্সপ্রেস এর সময় হলো দুপুর ২:২৫ মিনিটে এবং সেটা দীঘা যেতে সময় নেবে তিন ঘন্টা ২৫ মিনিট। এবং দিঘাতে পৌঁছাবে সন্ধ্যা পাঁচটা ৫০ মিনিটে।

দীঘা কিভাবে যাবেন?

দীঘা যাবার জন্য, আপনি কলকাতা ধর্মতলা/স্প্লানেট, বারাসাত, ও গড়িয়া থেকে বাস পেয়ে যাবেন। সেই বাসে করে যেতে পারেন। দ্বিতীয়ত আপনি হাওড়া স্টেশন থেকে দুটি ট্রেন আছে সেই ট্রেনে করে যেতে পারে। অন্যথায় আপনি পার্সোনাল একটি গাড়ি বুকিং করে দীঘাতে যেতে পারবেন।

নিউ দীঘা নাকি দীঘা কোনটা ভালো?

দুটো দীঘায় ভালো। কারণ দুটো দিঘাতে দুটো সময়ে ভালো লাগে। যেমন; স্নান করবার জন্য নিউ দীঘা খুবই ভালো। আর সন্ধ্যার সময় দীঘায় ঘুরবার জন্য ও বিভিন্ন ধরনের মাছ ভাজি, কাঁকড়া ভাজি, অন্যান্য জিনিসপত্র কেনাকাটা জন্য, বা বসবার জন্য খুবই ভালো জায়গা। তবে ওল্ড বা পুরনো দীঘার মার্কেটে একটু গন্ধ ভাব থাকে মাছ ভাজির জন্য।

কোন সময় দীঘায় পৌছালে ভালো হবে?

আপনি যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন, কোন সময়ের দিঘাতে পৌঁছালে ভালো হবে। তাহলে আমি আপনাকে বলব ফার্স্ট সকাল ৪ঃ৩০ থেকে ৫:০০ টার সময় পৌঁছালে খুবই ভালো হবে। কারণ সেই সময় আপনি সূর্য উদয় দেখে নিতে পারবেন, এবং ৭ঃ০০ টার পরে থাকার জন্য হোটেল বুকিং করে নিতে পারবেন।

দীঘায় এত বিখ্যাত কেন?

কারণ দিঘাতে উপলব্ধ আছে বঙ্গোপ সাগর এর তীর। যেখানে, সকলে আরামদায়ক করে স্নান করতে পারে, এবং সমুদ্রের ধারে বসে সমুদ্রের হাওয়া উপভোগ করতে পারে। সাথে সেখানে আছে অনেক দর্শনীয় স্থান, সূর্য উদয় এবং সূর্য অস্ত যাওয়ার দৃশ্য এবং থাকা খাবার ভালো জায়গা যেটা পর্যটকদের মুগ্ধ করে তোলে তাই দিঘা এত বিখ্যাত।

পুরী নাকি দীঘা সৈকত কোনটা ভালো?

পুরি নাকি দীঘা সৈকত কোনটি ভালো? এটা যদি আমাকে জিজ্ঞেস করেন। তাহলে আমি আপনাকে বলব দীঘা সৈকতটি পুরীর তুলনায় অনেক ভালো। তবে পুরীতে জগন্নাথের দর্শনীয় মন্দির এবং আরো অনেক কিছু উপলব্ধ আছে। কিন্তু দীঘাতে সেটা নেই। তবে নতুন করে কাজ চলছে এবং সেখানেও জগন্নাথ মন্দির তৈরি হচ্ছে। এছাড়াও পুরীর তুলনায় দীঘার আশেপাশে অনেক দর্শনীয় স্থান উপলব্ধ আছে যেটা অনেকটাই দীঘা বিচের মত।

দীঘায় কতজন যায়?

দীঘায় কতজন যায় এটা বলা অসম্ভব ব্যাপার। তবে আনুমানিক প্রতিদিন সেখানে ৫০০০০ থেকে ১ লাখের বেশি লোকজন যাতায়াত বা দর্শন করতে যায়। তাই আপনি চাইলে আপনি একাই যেতে পারেন, কিংবা একটি টিম করেও যেতে পারেন। সেখানে থাকা খাওয়া কোন অসুবিধা হবে না।

দীঘা সাগরের নাম কি?

দীঘা সাগরের নাম হল বঙ্গোপো মহাসাগর।

দিঘায় কয়টি জায়গা আছে?

দীঘায় পাঁচটি জায়গা আছে ঘুরবার জন্য, যেমন; উদয়পুর, তালসারি, মোহনা, লাল কাঁকড়া, ও ওড়িশা বর্ডার।

দীঘা কি দর্শনীয় স্থান?

হ্যাঁ, দীঘা একটি দর্শনীয় স্থান। যেখানে আছে অতল সমুদ্র, পার্ক, গেস্ট হাউস, এবং মাছের বাজার। এছাড়া আরো অনেক ধরনের দর্শনীয় স্থান।

কোন সময় দীঘায় গেলে ভালো হবে?

আপনি যদি দীঘায় ঘুরতে চান, তাহলে আমি আপনাকে বলব, গরমের সময় ও ঠান্ডার সময় ঘুরতে যাবেন। তাহলে আপনি দিঘাতে গিয়ে অনেক মজা করতে পারবেন।

কোন সময় দীঘায় না গেলে ভালো হবে?

বর্ষার সময় দীঘায় না গেলে ভালো হবে। কারণ বর্ষার সময় আকাশের ওয়েদার খারাপ থাকায় দীঘা সমুদ্রের অতল ঢেউয়ের তোলপাড় হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে দীঘা সমুদ্র নামা পর্যটকদের বারণ থাকে। তাই আপনি সেই সময় গেলে দীঘার মজা নিতে পারবেন না।

উপসংহার :

আমি আশা করি আপনাকে কলকাতা থেকে দীঘা যাত্রার খরচ ও বিভিন্ন জায়গায় ঘুরবার টিপস সম্পর্কে সম্পূর্ণ ধারণা দিয়ে সাহায্য করতে পেরেছি। যদি পেরে থাকি, তাহলে এটি বেশি বেশি করে আপনার বন্ধু-বান্ধবের কাছে শেয়ার করে দিন। আর এরকম ধরনের আরো নতুন নতুন নিবন্ধন পেতে আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলটিতে যোগদান করুন। সাথে আমাদের ওয়েবসাইটে প্রতিনিয়ত প্রবেশ করে আমাদের সাথে জুড়ে থাকুন। আর আপনার কোন প্রশ্ন থাকলে সেটি কমেন্ট বক্সে জানান। ধন্যবাদ।

আরো পোস্ট পড়ুন :-