বাড়ি বসে প্যান কার্ড তৈরি বা আবেদন করার সহজ উপায়

২০২৪ বাড়ি বসে প্যান কার্ড তৈরি বা আবেদন করার সহজ উপায় জানুন

আমরা সকলেই জানি বর্তমান সময়ে প্যান কার্ড একটি অত্যন্ত জরুরী এবং গুরুত্বপূর্ণ একটি নথিপত্র বা ডকুমেন্টস। যেটি আমাদের বিভিন্ন কাজের প্রয়োজন হয়ে থাকে। যেমন; ব্যাংকের একাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে, মোটরসাইকেল কিংবা গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে, বা বিদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রেও প্যান কার্ড প্রয়োজন হয়ে থাকে। তাই আমাদের কাছে যদি প্যান কার্ড না থেকে থাকে। তাহলে অনেক কাজের ক্ষেত্রে অনেক অসুবিধা বা সমস্যা হতে পারে।

তাই আপনার যদি প্যান কার্ড না থেকে থাকে এবং আপনি প্যান কার্ডের জন্য বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন। তাহলে এই নিবন্ধনটি সম্পন্ন পড়ুন। আর এখনই জেনে নিন আপনি ঘরে বসে আপনার মোবাইলের মাধ্যমে কিভাবে আপনার প্যান কার্ড তৈরি করতে পারবেন সেই বিষয়ে। তবে তার আগে আমরা জেনে নেব প্যান কার্ড কি এবং প্যান কার্ডের জন্য কিভাবে আবেদন করতে হয় ও কত টাকা খরচ পড়ে এই সমস্ত বিষয়ে।

প্যান কার্ড কি?

প্যান কার্ড হল প্রত্যেক ভারতীয় নাগরিকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ডকুমেন্টস বা নথিপত্র হিসেবে কাজ করে থাকেন। এটি ভারতের আইকার বিভাগে ইস্যু করা হয়ে থাকে। এছাড়া এই প্যান কার্ডটি এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যেটা আমাদের প্রায় সমস্ত কাজেই প্রয়োজন হয়ে থাকে। এবং এই প্যান কার্ডটি তৈরি করার পরে আপনি যে কার্ডটি পাবেন সেটিতে আপনার নাম, ছবি, বাড়ির ঠিকানা, আপনার সিগনেচার সহ ১০ সংখ্যার একটি প্যান নাম্বার দেওয়া থাকবে। যেটি ভারতীয় ইনকাম ট্যাক্স এর তরফ থেকে দেওয়া হয় এবং সেটিকে আমরা প্যান কার্ড বলি।

প্যান কার্ড তৈরির জন্য আবেদন কিভাবে করবেন

প্যান কার্ড তৈরির জন্য আবেদন করাটি খুব সহজ একটি ব্যাপার। আপনি শুধু নিচে দেওয়া টিপস গুলি অনুসরণ করুন। আর সহজেই আপনার প্যান কার্ডটি তৈরি করে ফেলুন।

তাই প্যান কার্ড তৈরি করতে সবার প্রথমে আপনি এখানে দেওয়া লিংকে ক্লিক করে আপনার মোবাইল বা কম্পিউটারে গুগল ক্রোম ব্রাউজার থেকে www.onlineservices.nsdl.com প্যান কার্ডের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটটি ওপেন করুন বা খুলুন।

তারপর আপনি প্যান কার্ডের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলে আপনার স্কিনে “অনলাইন প্যান অ্যাপ্লিকেশন” অপশনটি দেখতে পাবেন। তার মধ্যে থেকে আপনি “এপ্লাই অনলাইন” অপশনটি নির্বাচন করে, তার নিচে কিছু তথ্য পূরণ করতে হবে। যেমন; অ্যাপ্লিকেশন টাইপ, ক্যাটাগরি, টাইটেল, প্রথম নাম, শেষ নাম, ও মধ্যবর্তী নাম, তারপর আপনার জন্ম তারিখ, ইমেইল আইডি, ও ফোন নম্বরটি লিখে “বাই সাবমিটিং ডাটা” বক্সটিতে ক্লিক করে ঠিক চিহ্ন করে দিন তারপরে নিচে দেওয়া ক্যাপচার কোডটি ক্যাপচার বক্সে লিখে “সাবমিট” বাটনটিতে ক্লিক করুন।

প্যান কার্ড তৈরি 1

১. অ্যাপ্লিকেশন টাইপ এ আপনি “নিউ প্যান ইন্ডিয়ান সিটিজেন” অপশনটি নির্বাচন করুন। আর আপনি যদি ভারতের বাইরে থেকে হয়ে থাকেন। তাহলে “নিউ প্যান ফরেন সিটিজেন” অপশনটি নির্বাচন করুন। আর যদি আপনার প্যান কার্ডের কোন ভুল সংশোধন করতে চান তাহলে “চেঞ্জ হওয়ার কারেকশন এক্সেসটিং প্যান কার্ড” অপশনটি নির্বাচন করুন। তবে এটির জন্য আপনি কমেন্ট করতে পারেন আমি পরবর্তী নিবন্ধন প্যান কার্ড ঠিক করার বিষয়ে আপনাদের সাথে শেয়ার করব।

২. ক্যাটাগরি অপশনে আপনি “ইন্ডিভিজুয়াল” অপশনটিকে নির্বাচন করুন। আর আপনি যদি একজন এসিস্ট্যান্ট কিংবা আপনার কোন কোম্পানি থেকে থাকে তাহলে সে ক্ষেত্রে আপনি আপনার প্রয়োজনীয় অপশনটি নির্বাচন করুন।

৩. অ্যাপ্লিকেশন ইনফর্মেশন অপশন এর মধ্যে যে টাইটেল অপশনটি আছে। সেখানে আপনি যদি একজন ছেলে হন তাহলে Shri নির্বাচন করুন আর মেয়ে হলে Smt আর আপনি যদি কুমারী হন তাহলে কুমারী নির্বাচন করুন।

৪. তারপরে একদম শেষে নাম বক্সে আপনার নামের শেষ নামটি লিখুন এবং ফাস্ট নেম বক্সে আপনার নামের প্রথম নামটি লিখুন ও মিডিল নেম বক্সে আপনার নামের মধ্যবর্তী যে নামটি আছে সেটি লিখুন।

৫. পরবর্তী ডেট অফ বার্থ বক্সে আপনার জন্ম তারিখটি লিখুন। ইমেইল আইডি বক্সে  আপনার ইমেইল আইডিটি লিখুন। এবং ফোন নাম্বার বক্সে আপনার ফোন নম্বরটি লিখুন।

আপনি যখন আপনার সমস্ত তথ্য লিখে “সাবমিট” বাটনে ক্লিক করবেন। তখন আপনাকে পরবর্তী পেজে নিয়ে যাবে এবং সেখানে আপনাকে একটি টোকেন নাম্বার দেওয়া হবে। সেই টোকেন নাম্বারটি কে আপনি কপি করে নিন বা কোথাও লিখে নিন। তারপর “কন্টিনিউ উইথ প্যান কার্ড অ্যাপ্লিকেশন ফর্ম” বাটনটিতে ক্লিক করুন।

প্যান কার্ড তৈরি 2

এরপর আপনাকে পরবর্তী পেজে নিয়ে যাবে। সেখানে আপনার আধার কার্ডের শেষের চার সংখ্যাটি লিখুন। তারপর আপনার আধার কার্ডে থাকা নামটি লিখুন। তারপর আপনার যার নামে প্যান কার্ডটি তৈরি হবে তার নামটি লিখুন। সাথে তার জন্ম তারিখ ও সেটি ছেলে না মেয়ে সেটি নির্বাচন করুন। তারপর আপনার যদি অন্য কোন নাম থাকে তাহলে আপনি “হ্যাভ ইউর এভার বিন নো বাই এনি আদার নেম” অপশনটিতে “Yes” নির্বাচন করে সেই নামটি লিখুন। আর যদি না থাকেন তাহলে আপনি নো অপশনটি নির্বাচন করুন। এবং নিচের ডিটেলস অফ পেরেন্টস অপশনটিতে আপনার বাবার নাম ও মায়ের নামটি লিখে পেজটি নিচের দিকে নামিয়ে “নেক্সট” বাটনটিতে ক্লিক করুন।

প্যান কার্ড তৈরি 3

পরবর্তী পার্সোনাল ডিটেলস বা তথ্য অপশনটিতে আপনি কিভাবে ইনকাম করেন সেটি নির্বাচন করুন। তারপর আপনি বাড়ি না অফিসে আপনার প্যান কার্ডটি রিসিভ করতে চান বা নিতে চান সেটি নির্বাচন করুন এবং সেই ঠিকানাটি লিখুন। তারপর টেলিফোন ও ইমেইল আইডি অপশনটিতে আপনি আপনার দেশের আই-এস-ডি কোডটি নির্বাচন করুন। তারপর তারপর একদম শেষে রেস্পেক্টিভস অপশনটিতে “ইয়েস” নির্বাচন করে আপনার পুরো নামটি লিখুন এবং আপনার ঠিকানাটি লিখুন। তারপর পেজটি একদম নিচের দিকে নামিয়ে “নেক্সট” বাটনে ক্লিক করুন।

প্যান কার্ড তৈরি 4

পরবর্তী কন্টাক্ট ও অন্যান্য ডিটেলস বা তথ্য অপশনটির মধ্যে “ফর হেল্প অন ইউ কোড” অপশনটিতে আপনি কোথাকার নাগরিক সেটি নির্বাচন করুন। যেমন; উদাহরণস্বরূপ আমি ভারতবর্ষের নাগরিক এই কারণে আমি ইন্ডিয়ান সিটিজেন নির্বাচন করেছি। তারপর স্টেট বা রাজ্য অপশনটিতে ওয়েস্ট বেঙ্গল এবং সিটি অপশনটিতে শহরের নাম ও এরিয়া অপশনটিতে আপনি যেখানে বাস করেন সেই এলাকার নাম নামটি লিখে “Fetch” বাটনে, ক্লিক করুন তারপর নিচে দেওয়া “নেক্সট” বাটনটিতে ক্লিক করুন।

প্যান কার্ড তৈরি 7

পরবর্তী এ-ও-কোড অপশনটিতে আপনি আপনার আইডেন্টি ভেরিফিকেশনের জন্য প্রুফ অফ আইডেন্টি, প্রুফ অফ এড্রেস এবং প্রুফ অফ ডেট অফ বার্থ বা জন্ম তারিখ এই অপশন গুলোতে আপনি আধার কার্ড, প্যান কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট বা আরো অন্যান্য উপলব্ধ ডকুমেন্টসগুলোর থেকে যেকোনো একটি কে নির্বাচন করুন। তারপর ডিক্লারেশন অপশনটিতে “রিপ্রেস্পেক্টিভ এক্সেস” অপশনটি নির্বাচন করুন। তারপর প্লেস বা জায়গা অপশনটিতে আপনার এলাকার নামটি লিখে “সাবমিট” বাটনে ক্লিক করুন।

প্যান কার্ড তৈরি 5

আপনি “সাবমিট” বাটনে ক্লিক করলে আপনাকে পরবর্তী পেজে নিয়ে যাবে। এবং সেখানে আপনি এতক্ষণ যে সমস্ত তথ্য বা ইনফরমেশন গুলো দিয়ে প্যান কার্ড করার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন সেই সমস্ত তথ্য তথ্যগুলো আপনি দেখতে পাবেন। সেগুলো আপনি একবার ভালো করে চেক করে নিন। তারপর পেজটিকে একদম নিচের দিকে নামিয়ে “Proceed” বাটনে ক্লিক করুন।

প্যান কার্ড তৈরি 6

এরপর একদম শেষে আপনি আপনার ডকুমেন্টস ও সিগনেচার এর ছবি তুলে সেটিকে আপলোড করে দিন। তারপর অনলাইনে ক্রেডিট কার্ড বা ডেবিট কার্ড, নেট ব্যাঙ্কিং, বা ইউপিআই এর মাধ্যমে আপনার যে প্যান কার্ড তৈরির ফী, টি পেমেন্ট করে দিন।

আপনার প্যান কার্ড তৈরির ফ্রি প্রদান হয়ে গেলে। আপনাকে পরবর্তী পেজে রিডারেট করবে এবং সেখানে একটি নাম্বার দেওয়া থাকবে। সেই নাম্বারটি কে আপনি কপি করে রেখে দিন। কারণ ওই নাম্বারটি হল আপনার প্যান কার্ড নাম্বার। ওই নাম্বারটি ব্যবহার করে আপনি সব জায়গায় কাজ চালাতে পারেন। তারপর ১৫ দিনের মধ্যে যখন আপনার প্যান কার্ডটি আপনার হাতে চলে আসবে। তখন আপনার আর ওই নাম্বারের প্রয়োজন হবে না। এবং আপনার ওই প্যান কার্ডের মাদ্ধমে সমস্ত অসুবিধা গুলি দূর করতে পারবেন।

প্যান কার্ড তৈরি করতে কত টাকা খরচা?

সাধারণত প্যান কার্ড তৈরি করতে ৬৯ টাকা থেকে শুরু হয়ে থাকে। কিন্তু আপনি যদি কেওয়াইসিও, জিএসটি, ও ট্যাক্স বিল সহ প্যান কার্ড তৈরি করতে চান তাহলে আপনাকে সে ক্ষেত্রে ১০৬ টাকা খরচা হতে পারে। এবং আপনি যদি আরো কিছু আপগ্রেড ভার্সন এর প্যান কার্ড নিতে চান। তাহলে সেটি এক হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে।

প্যান কার্ডের আবেদন করতে কি কি লাগে?

প্যান কার্ডের আবেদন করতে আপনাকে আপনার আধার কার্ড, এক কপি ছবি, ও আপনার সিগনেচারের ছবি এবং ১০৬ টাকা লাগবে। তবে আপনি চাইলে আধার কার্ড ছাড়াও আপনার পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ও আরো অন্যান্য ডকুমেন্টগুলো এর সাথে আপলোড করে রাখতে চান তাহলে সেগুলোর প্রয়োজন হবে।

প্যান কার্ড তৈরি করার কত দিন বাদে পাওয়া যায়?

সাধারণত একটি প্যান কার্ড অনলাইনে তৈরি করা মাত্রই সেই প্যান কার্ডটি তৈরি হয়ে যায়। এবং আপনাকে সেই প্যান কার্ডের নাম্বার দিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু যে ফিজিক্যাল কার্ডটি দেওয়া হয় সেই কার্ডটি পেতে গেলে আপনাকে ১৫ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। মানে আপনি প্যান কার্ড তৈরি করা থেকে ১৫ দিনের মধ্যে পেয়ে যাবেন।

বাড়ি বসে মোবাইলে প্যান কার্ডের আবেদন করলে কি কোন অসুবিধা আছে?

না, একদম না, আপনি বাড়ি বসে অনলাইনে মোবাইল বা কম্পিউটার মাধ্যমে প্যান কার্ডের জন্য আবেদন করলে কোন অসুবিধা নেই। তবে একটি অসুবিধা আছে। সেটি হল আপনার নিকটবর্তী যত প্যান কার্ড তৈরি করার দোকান বা স্টোর গুলো আছে সেগুলো হয়তো আর চলবে না।

আমি প্যান কার্ড কিভাবে হাতে পাব?

প্যান কার্ড হাতে পাওয়ার জন্য আপনাকে সবার প্রথমে অনলাইনে প্যান কার্ডের জন্য আবেদন করতে হবে। তারপরে আপনার প্যান কার্ডটি তৈরি হয়ে গেলে সেটিকে আপনার নিকটবর্তী পোস্ট অফিসে পাঠানো হবে। এবং সেই পোস্ট অফিস থেকে আপনার দেওয়া ঠিকানাতে আপনার প্যান কার্ড টি দেওয়া হবে বা আপনি হাতে পাবেন।

উপসংহার :

আমি আশা করি আপনি বাড়ি বসে অনলাইনের মাধ্যমে প্যান কার্ড তৈরি কিভাবে করবেন এবং প্যান কার্ডের আবেদন করতে কত টাকা লাগে? ও কত সময় লাগে এই সমস্ত বিষয়ে আপনাকে সম্পূর্ণ ধারণা দিতে পেরেছি। যদি পেরে থাকি এবং এই নিবন্ধনটি আপনাকে প্যান কার্ড তৈরি করতে সাহায্য করে থাকে। তাহলে অবশ্যই এটি বেশি বেশি করে আপনার বন্ধু ও পরিবারের সাথে শেয়ার করে দিন। আর এরকম ধরনের আরো নতুন নতুন টিপস এবং ট্রিকসঅনলাইন ইনকামের বিষয়ে জানতে আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলটিতে যোগদান করুন। সাথে এই তরিকুল বাঙালি ওয়েবসাইটটিকে সাবস্ক্রাইব করে রাখুন।

আরো পোস্ট পড়ুন :-