সঠিক হোস্টিং কিভাবে নির্বাচন করবেন আপনার ওয়েবসাইট এর জন্য
এর আগের আর্টিকেলে আমরা জেনেছি হোস্টিং কি ও কিভাবে কাজ করে? এই সমস্ত বিষয়ে। কিন্তু একটি হোস্টিং কেনার আগে বা নির্বাচন করার আগে আমাদের কি কি যান প্রয়োজন বা কি দেখে হোস্টিং নির্বাচন করবেন এটা অনেকের অজানা তাই এই আর্টিকেলটি তাদের জন্য লেখা। তাই আপনি যদি না জেনে থাকেন হোস্টিং কিভাবে নির্বাচন করে তাহলে এই নিবন্ধনটি সম্পন্ন পড়ুন।
একটি সঠিক হোস্টিং নির্বাচন করার আগে আমাদের হোস্টিং সম্পর্কে কিছু জানা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। অন্যথায় আপনি আপনার ওয়েবসাইট এর জন্য সঠিক হোস্টিং না নির্বাচিত করতে পারলে ওয়েবসাইটটি বিভিন্ন ধরনের প্রবলেম দেখা দিতে পারে। তাই চলুন দেরি না করে আমরা জেনে নেই যে একটি সঠিক হোস্টিং নির্বাচন করার আগে আমাদের কি কি দেখা দরকার।
সঠিক হোস্টিং কিভাবে নির্বাচন করবেন
যেকোনো হোস্টিং কোম্পানিকে আপনার ওয়েবসাইটের জন্য নির্বাচন করার আগে আপনি সেই হোস্টিং কোম্পানির হোস্টিং ব্যবহারকারী দর্শকদের এর রিভিউ বা ফিডব্যাক গুলি দেখা দরকার। এটি জানার জন্য আপনি ব্লগ পোস্ট বা ইউটুবে ভিডিও গুলি দেখতে পারেন। তারপর সেই হোস্টিং টিতে আপনার ওয়েবসাইটের জন্য যা প্রয়োজনীয় সেই সমস্ত প্রয়োজনীয় সার্ভিসগুলো উপলব্ধ আছে কিনা এটা জানা সবথেকে জরুরী। যেমন; ওয়েব হোস্টিং এর ব্যান্ডউইথ, এস এস এল, ইমেল, হোস্টিং এর এস্পেস বা স্টোরেজ, ওয়েবসাইটের ব্যাকআপ, e-কমার্স ফিচারস, অটোমেটিক আপডেট, এ ছাড়া আরো অনেক কিছু যেগুলো একটি সফল ওয়েবসাইট তৈরি করতে প্রয়োজনীয়। উদহারণ ;
ওয়েবসাইট : আপনি ওই হোস্টিং প্লান টিতে কতগুলো ওয়েবসাইট হোস্ট করতে পারবেন এবং সেটা একটি জনপ্রিয় বা বিশ্বাসযোগ্য প্রোভাইডার কি নাম সেটি দেখুন।
স্টোরেজ : আপনাকে ওই হোস্টিং প্লান টিতে কতটা স্পেস বা জায়গা দিচ্ছে সেটা চেক করে নিন, এবং সেই হোস্টিং স্টোরেজ টির ডিস্কটি কোন ধরনের দিচ্ছে সেটা চেক করে নিন SSD, না NVMe সেটি দেখুন তারপর সেই হোস্টিং স্টোরেজ টি বা জায়গাটি আপনার ওয়েবসাইটের জন্য পারফেক্ট কিনা সেটা দেখুন। যদি না হয় তাহলে তার থেকেও উন্নত কোয়ালিটি হোস্টিং প্যাকেজ নির্বাচন করুন।
ব্যাকআপ : ওই হোস্টিং প্ল্যান টিতে তারা ফ্রিতে আপনার ওয়েবসাইটের জন্য ব্যাকআপ সার্ভিস প্রোভাইড করছে কিনা। কারণ তারা যদি ব্যাকআপ না দিয়ে থাকে তাহলে কোন কারণে আপনার ওয়েবসাইটটি ডিলেট হয়ে গেলে সেটা আপনি পুনরায় আর অনলাইন লাইভ করতে পারবেন না। তাই অবশ্যই হোস্টিং প্ল্যান টিতে ফ্রি ব্যাকআপ উপলব্ধ আছে কিনা সেটা দেখে নিন।
SSL : সাইবার সিকিউরিটি লক এটি সাধারণত সমস্ত হোস্টিং কোম্পানিগুলো দিয়ে থাকে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে অনেক কোম্পানি এই SSL ফ্রিতে তাদের হোস্টিং প্লানের সাথে দেয় না। ফলে আপনাকে এমন একটি hosting প্লান নির্বাচন করতে হবে যেটাতে ফ্রিতে SSL সার্টিফিকেট দেয়। কারণ SSL সার্টিফিকেট না দিলে আপনার ওয়েবসাইটটির পতি কোন দর্শক বিশ্বস্ত হবে না এবং google এর কাছে স্প্যাম ওয়েবসাইট বলে পরিচিত হয়ে যাবে।
ব্যান্ড উইথ : এটা হল যে কোন হোস্টিংয়ের একটি সবথেকে বড় পাঠ কারণ আপনার ওয়েবসাইটে যত বেশি পরিমাণে ব্যান্ডউইথ থাকবে তত বেশি পরিমাণে দর্শক প্রবেশ করতে পারবে। যদি ব্যান্ডউইথের পরিমাণ সীমিত থাকে তাহলে আপনার ওয়েবসাইটে বেশি পরিমাণে দর্শক প্রবেশ করলে ওয়েবসাইটটি বা হোস্টিং টি ডাউন হয়ে যেতে পারে। ফলে আপনার ওয়েবসাইটটি অনলাইন থেকে অফলাইনে চলে যেতে পারে। তাই আপনি যে হোস্টিং প্ল্যান-টিতে আনলিমিটেড কিংবা ১০ GB উপরে ব্যান্ডউইথ থাকবে সেই হোস্টিং পরিকল্পনাটি নির্বাচন করুন।
ইমেইল একাউন্ট : এটি সাধারণত সমস্ত ধরনের শেয়ার এবং ক্লাউড হোস্টিং এ দিয়ে থাকে। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে অনেক ক্লাউড ভিপিএস এবং ডেডিকেটেড হোস্টিংয়ে এই ইমেইল হোস্টিংতে তারা প্রদান করে না। ফলে আপনাকে Zoho এর মতো অন্য কোন ইমেইল প্রোভাইড এর সার্ভিস ব্যবহার করে আপনার নিজের ব্যবসা নামে একটি ইমেইল তৈরি করতে পারবেন। তবে আপনার যদি নতুন ওয়েবসাইট হয় তাহলে আপনি যেকোনো ধরনের “শেয়ার হোস্টিং, বা ক্লাউড হোস্টিং” কিনলে সেই হোস্টিং প্লান টিতে ফ্রি ইমেইল একাউন্ট পেয়ে যাবেন। যেটা ব্যবহার করে আপনার নিজস্ব একটি ব্যবসায়িক ইমেইল তৈরি করতে পারবে।
লোকেশন : যেকোনো ওয়েবসাইট তৈরি করতে গেলে তার লোকেশনটি অত্যন্ত জরুরী তাই আপনি সবার প্রথমে যেই হোস্টিং কোম্পানি থেকে হোস্টিং প্লানটি নির্বাচন করবেন। সেটি কোন কোন দেশের সার্ভারের সাথে যুক্ত আছে এটা দেখা একটা জরুরী বিষয়। কারণ কিছু কিছু ওই হোস্টিং বা সার্ভার আছে যেগুলো শুধুমাত্র সেই দেশের ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়। ফলে আপনার ওয়েবসাইটটি যদি অন্য দেশ থেকে কোনো ইউজার ব্যবহার করতে চাই বা ভিজিট করতে চাই তাহলে সে সেটি ব্যবহার করতে পারবে না। তাই অবশ্যই আপনি একটি পরিচিত ও ভালো হোস্টিং প্রোভাইডার এর কাছে থেকে হোস্টিং কিনুন।
CDN : কনটেন্ট ডেলিভারি নেটওয়ার্ক এটিও যেকোনো হোস্টিং এর একটি অন্যতম পাঠ। কারণ এই “সিডিএন” নেটওয়ার্ক টি আপনার ওয়েবসাইটের লোডিং স্পিড ৪০% পর্যন্ত ফাস্ট করে দেয়। যার কারণ এই CDN এর মাধ্যমে আপনার ওয়েবসাইটে CSS, জাভাস্ক্রিপ্ট, এবং এইচটিএমএল এর মত বড় ফাইলগুলোকে ছোট করে দর্শকদের কাছে দ্রুত ওয়েবসাইটটি ওপেন হওয়ার কাজ করে।
আপটাইম গ্যারান্টি ও কাস্টমার সাপোর্ট : যেকোনো হোস্টিং কোম্পানির হোস্টিং এর সার্ভার আপ টাইম ও কাস্টমার সাপোর্ট বলে দেয় সেই হোস্টিং কোম্পানিটি বা হোস্টিং টি কেমন। কারণ আপনার ওয়েবসাইটের আপ টাইম যত ভালো থাকবে সেই হোস্টিংটি তত ভালো। কারণ যদি আপ টাইম ডাউন হয়ে যায় তাহলে আপনার ওয়েবসাইটটি ও ডাউন হয়ে যাবে বা অফলাইন হয়ে যাবে। তাই অবশ্যই যে কোন হোস্টিংয়ের জন্য Uptime দেখাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া কাস্টমার সাপোর্টটি ও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আপনার ওয়েবসাইটে যেকোনো ধরনের প্রবলেম দেখা দিলে আপনি সেই হোস্টিং কোম্পানির উপলব্ধ কাস্টমারের সাপোর্ট টিমের সাথে যেন সহজে যোগাযোগ করে আপনার ওয়েব সাইটে আসা প্রবলেম টিকে ফ্রিতে fix বা ঠিক করা যায়।
এছাড়া একটি ভালো হোস্টিং নির্বাচন করতে গেলে সেই হোস্টিং প্রভাটারটি টাকা ফেরত গ্যারান্টি দিচ্ছে কিনা এবং সেই হোস্টিং প্ল্যানে মালোয়ার স্ক্যানার এবং ফায়ারওয়াইল, DDoS প্রোটেকশন। এই সমস্ত কিছু দিচ্ছে কিনা দেখে নিন তারপরে আপনার ওয়েব হোস্টিংটি নির্বাচন করুন।
জানুন : আমি এই বাংলা ব্লগ থেকে কত টাকা আয় করি।
আমার জন্য কি হোস্টিং দরকার
তবে আপনি যদি একটি নতুন ওয়েবসাইট তৈরি করে করার কথা ভাবেন এবং আপনার ওয়েবসাইটটি বেশি বড় না হয় তাহলে আপনি হোস্টিংজার, Bluehost, হোস্ট আরমাদা, Youstable, ও Chemicloud এর মত হোস্টিং কোম্পানিগুলো থেকে যেকোনো ধরনের শেয়ার বা ক্লাউড হোস্টিং পরিকল্পনা কিনে আপনার ওয়েবসাইটটি শুরু করতে পারেন। কারণ এই হোস্টিং প্লান গুলি মাসে ১০০০০ থেকে এক লাখ পর্যন্ত দর্শক সহজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।
আর আপনার ওয়েবসাইটটি যদি বড় হয় বা আপনার আগে থেকে কোন ওয়েবসাইট থেকে থাকে সেই ওয়েবসাইটটি মাইগ্রেট করতে চান বা হোস্টিংটি আপগ্রেড করতে চান। তাহলে সে ক্ষেত্রে আপনি Cloudways এর ক্লাউড হোস্টিং, কিংবা হোস্টিংগার, Bluehost, বা হোস্টআরমাদার মতো কোম্পানিগুলো থেকে ভিপিএস বা ডেডিকেটেড সার্ভার কিনে সেটিতে আপনার ওয়েবসাইট তৈরি করুন। কারণ এই ধরনের হোস্টিং প্ল্যান গুলিতে আপনি সহজে বড়ো ধরনের ওয়েবসাইট বানাতে পারবেন সাথে মিলিয়ন মিলিয়ন ট্রাফিক বা ভিজিটরকে সহজে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।
কিভাবে ওয়েবসাইট হোস্ট করে
ওয়েবসাইট হোস্ট করার জন্য সবার প্রথমে আপনাকে একটি ওয়েব হোস্টিং কিনতে হবে। তারপর সেই হোস্টিং থেকে পাওয়া “নেম সার্ভারটি” কপি করে আপনার ডোমিন নামের “ডিএনএস ম্যানেজমেন্ট” এর মধ্যে সেটা আপলোড করে দিয়ে ওয়েব হোস্টিং এবং ডোমিন এর সাথে সংযুক্ত করতে হবে। তারপরে আপনার হোস্টিং সার্ভার টি ওপেন করে সেখানে উপলব্ধ সি-প্যানেল এর মধ্যে গিয়ে ওয়ার্ডপ্রেস, জুমুলা, PHP, বা এইচটিএমএল এর মত এপ্লিকেশন গুলো ইন্সটল করে আপনার ওয়েবসাইট তৈরি করতে পারবে বা হোস্ট করতে পারবে। ওয়েবসাইট তৈরি কিভাবে করে এটা জানতে এখানে ক্লিক করে এই নিবন্ধনটি পড়ুন।
ভালো হোস্টিং সার্ভিস কি কি?
বর্তমান বাজারে নতুন ওয়েবসাইট বা ছোটখাট ব্যবসায়ীদের জন্য ভালো মানের হোস্টিং হলো “Shared বা ক্লাউড হোস্টিং” পরিকল্পনা। তবে আপনি যদি এর থেকে উন্নতমানের হোস্টিং সার্ভিস এর সন্ধান করেন তাহলে আপনি “ভিপিএস বা ডেডিকেটেড সার্ভার” কে নির্বাচন করতে পারেন যেটি আপনার জন্য ভালো হবে। তবে অবশ্যই নতুনদের জন্য সেরা shared বা cloud হোস্টিং একটি পারফেক্ট বা সঠিক নির্বাচন বলে আমি মনে করি।
হোস্টিং প্রোভাইডার পরিবর্তন করা যাবে কি?
হ্যাঁ, আপনি অবশ্যই হোস্টিং প্রোভাইডার পরিবর্তন করতে পারবেন। তবে এর জন্য আগে আপনাকে অন্য হোস্টিং কোম্পানিতে হোস্টিং কিনতে হবে। তারপরে আপনার যে হোস্টিং কোম্পানিতে ওয়েবসাইটটি হোস্ট করা আছে সেই হোস্টিং থেকে ব্যাকআপটি নিয়ে সেটিকে নতুন ক্রয় করা হোস্টিং এ আপলোড করতে হবে। তারপর আপনি সেই নতুন হোস্টিং এ আপনার ওয়েবসাইটটি পুনরায় চালু করতে পারবেন। বা আপনার পুরনো হোস্টিংটি পরিবর্তন করতে পারে।
জানুন : ব্লগ লিখে আয় করার উপায় সম্মন্ধে।
কোথা থেকে হোস্টিং নির্বাচন করলে ওয়েবসাইটের জন্য সঠিক হবে?
এখনকার সময় অনলাইনে উপলব্ধ অনেক হোস্টিং ওয়েবসাইট উপলব্ধ আছে। তবে তার মধ্যে থেকে আমার জানা এবং সবথেকে জনপ্রিয় কিছু হোস্টিং প্রোভাইডার গুলির মধ্যে হল Bluehost, Hostinger, Youstable, Hostarmada, ও Chemicloud এর মতো লাটফ্রম গুলি থেকে আপনি আপনার পছন্দের যেকোনো শেয়ার্ড, ক্লাউড, ভিপিএস, ও ডেডিকেটেড হোস্টিং প্ল্যানটি কিনতে পারেন। এই হোস্টিং প্রোভাইডার গুলি আপনার ওয়েবসাইটের জন্য সঠিক বা পারফেক্ট হবে বলে আমি মনে করি। কারণ আমি নিজে এই হোস্টিং প্লাটফর্ম গুলোই ব্যবহার করে থাকি এবং এখান থেকে খুব সুন্দর ওয়েবসাইটের জন্য আপ টাইম ও কাস্টমার সাপোর্ট পাওয়া যায়। তাই আমি আপনাদের জন্য রেকমেন্ড করলাম। তাই আপনি চাইলে এখানে দেওয়া লিংকে ক্লিক করে এই হোস্টিং কোম্পানি থেকে ওই ওয়েব হোস্টিং ক্রয় করতে পারেন।
উপসংহার :
আপনি সঠিক হোস্টিং কিভাবে নির্বাচন করবেন এই সম্পর্কে আশা করি আমি আপনাকে সম্পূর্ণ ধারণা দিতে পেরেছি। যদি পেরে থাকি বা এই নিবন্ধনের মাধ্যমে আপনার জন্য একটি সঠিক হোস্টিং নির্বাচন করার বিষয়ে উপকার করতে পেরে থাকি তাহলে অবশ্যই এটি বেশি করে শেয়ার করে দিন। আর আপনার এই হোস্টিং নির্বাচন সম্পর্কে কোন প্রশ্ন থাকলে সেটি কমেন্ট বক্সে জানান। এছাড়া এরকম ধরনের আরো নতুন নতুন ওয়েব হোস্টিং, ডোমেইন ও ব্লগিং সম্পর্কে জানতে আমাদের ব্লগটি সাবস্ক্রাইব করে রাখুন। সাথে আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলটিতে যোগদান করুন।