স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ কয়টি ও কি কি এবং মধ্যে পার্থক্য কি?
এই আর্টিকেল আমরা জানবো স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ কি ও কয়টি এবং তাদের মধ্যে পার্থক্য কি কি সেই সম্পর্কে। কারণ আমরা সবাই বাংলা ভাষাতে কথা বলি কিন্তু স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ সম্পর্কে জানিনা এবং স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ সংখ্যা কয়টি ও কি কি জানতে এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ুন।
এই আর্টিকেলে আমি স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ সম্পর্কে জানতে সমস্ত উদহারণ সহ তোমাদের সাথে শেয়ার করেছি। তো চলুন দেরি না করে জেনে নেয়া যাক।
স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ কি?
স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ হলো বাংলা ভাষার সংখ্যা। যে সংখ্যা গুলোকে ব্যাবহার করে আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলি বা লিখি সেই ধ্বনি কে স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ বলে থাকি এবং এর মোট সংখ্যা হলো ৫২ টি । এটিকে আমরা সহজ ভাষায় স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনি বলে থাকি।
স্বরবর্ণ হলো যে সকল সংখ্যা বা বর্ণ অন্য সংখ্যা বা বর্ণের ছাড়া উচ্চারিত হতে পারি তাকে আমরা বলি স্বরবর্ণ বা স্বরধ্বনি।
ব্যঞ্জনবর্ণ হলো যে সকল সংখ্যা বা বর্ণ অন্য বর্ণের বা সংখ্যা ছাড়া উচ্চারিত হতে পারে না তাকে আমরা বলি ব্যঞ্জনবর্ণ বা ব্যঞ্জনধ্বনি। যেমন: (ক্+অ=) ক; (গ্+অ=) গ; (প্+অ=) প ইত্যাদি। এই ব্যঞ্জনবর্ণ গুলি উচ্চারণ করতে আমাদের মুখে বাধা সৃষ্টি হয় যেটা স্বরধ্বনি তে হয়না।
ধ্বনি, বর্ণ ও অক্ষর কাকে বলে?
ধ্বনি কাকে বলে ? কোন ভাষার উচ্চারিত শব্দকে বিশ্লেষণ করলে তার যে পরমাণু বা অবিভাজ্য ক্ষুদ্রতম অংশ পাওয়া যায় তাকে ধ্বনি বলে। যেমন – অ, আ, ক, খ, গ, ঘ।
বর্ণ কাকে বলে ? ধ্বনির চক্ষু গ্রাহ্য লিখিত রূপের প্রতীক বা চিহ্নকেই বর্ণ বলে। যেমন – অ, আ, ক, খ।
অক্ষর কাকে বলে ? নি:শ্বাসের স্বল্পতম প্রয়াসে একই বক্ষ-স্পন্দনের ফলে যে ধ্বনি বা ধ্বনিগুচ্ছ একবারে উচ্চারিত হয় তাকে অক্ষর বলে। যেমন ‘স্পন্দন’ ‘সপেক্ষ’ ‘অঞ্চল’ এই শব্দটিতে দুইটির বেশি সংখ্যা আছে তাই এটি অক্ষর।
স্বরবর্ণ কয়টি ও কি কি?
বাংলা স্বরবর্ণ সংখ্যা হলো ১২ টি। এবং সেগুলি হলো – অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ ঋ, ঌ, এ, ঐ, ও, ঔ.
সাধারণত স্বরবর্ণ কে ইংরেজিতে Vowel বলা হয় যার সংখ্যা ৫ টি যেমন উদহারণ A, E, I, O, U.
স্বরবর্ণ দুই প্রকার হয় ১) মৌলিক স্বরবর্ণ। ২) যৌগিক স্বরবর্ণ।
১) মৌলিক স্বরবর্ণ হলো অ, আ, ই, ঈ, উ, ঊ, ঋ, ঌ, এ, ও বাংলায় এই বর্ণ গুলিকে মৌলিক স্বরবর্ণ বলা হয়.
২) বাংলা বর্ণমালায় ঐ, ঔ এই দুটি সংখ্যা কে যৌগিক স্বরবর্ণ বলে জান যাই কারণ এই দুটো বর্ণকে বলতে গেলে দুটো সংখ্যার সংযোগ তৈরী হয় তাই।
এই স্বরবর্ণ গুলো বলতে মুখে কোনো বাধা প্রাপ্ত হয়না। এগুলো হলো বাংলা ভাষা শিখতে গেলে সবার প্রথম ধাপ, যেগুলোকে আমরা পড়ি :
বর্ণ | স্বরবর্ণ |
---|---|
অ | অজগর অজগর আসছে তেড়ে। |
আ | আমটি আমি খাব পেড়ে। |
ই | ইঁদুর-ছানা ভয়ে মরে। |
ঈ | ঈগল পাখি পাছে ধরে। |
উ | উট চলেছে মুখটি তুলে। |
ঊ | (দীর্ঘ) ঊ-টি আছে ঝুলে। |
ঋ | ঋষি মশাই বসেন পূজায়। |
ঌ | ৯-কার যেন ডিগবাজি খায়। |
এ | একা গাড়ি খুব ছুটেছে। |
ঐ | ঐ দেখ ভাই চাঁদ উঠেছে। |
ও | ওল খেয়ো না, ধরবে গলা। |
ঔ | ঔষধ খেতে মিছে বলা। |
আরো জানুন : রেফারেল কোড কী ও মানে কী?
ব্যঞ্জনবর্ণ কয়টি ও কি কি?
বাংলা ব্যঞ্জনবর্ণ সংখ্যা হলো ৪০ টি। এবং সেগুলি হলো – ক, খ, গ, ঘ, ঙ, চ, ছ, জ, ঝ, ঞ, ট, ঠ, ড, ঢ, ণ, ত, থ, দ, ধ, ন, প, ফ, ব, ভ, ম, য, র, ল, ব, শ, ষ, স, হ, ড়, ঢ়, য়, ৎ, ং, ঃ, ঁ.
ঠিক একই ভাবে ব্যঞ্জনবর্ণ ইংরেজি নাম হলো consonants. আর এই consonants যেমন vowels ছাড় উচ্চারণ করা যায়না তেমনি ব্যঞ্জনবর্ণ স্বরবর্ণ ছাড়া উচ্চারণ হয়না।
Consonants এর সংখ্যা ২১ টি, সেগুলি হলো – B, C, D, F, G, H, J, K L, M, N, P, Q, R, S, T, V, W, X, Y, Z.
ব্যঞ্জন ধ্বনিকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয় সেগুলো হলো :
- স্পর্শ বর্ণ
- উষ্ম বর্ণ
- অযোগ বর্ণ
- অন্তঃস্থ বর্ণ
স্পর্শ বর্ণ : যে বর্ণ গুলো উচ্চারণ করার সময় জিভে যদি তালু, কণ্ঠ, দন্ত, এবং ওষ্টের সাথে স্পর্শ হয়ে যে কথা বা বর্ণ গুলিকে বলি সেগুলো হলো স্পর্শ বর্ণ। এই স্পর্শ বর্ণে মোট ২৫ সংখ্যার ক থেকে ম পর্যন্ত।
উষ্ম বর্ণ : আসলে উষ্ম কথার মানে হলো গরম। সুতারং আপনি যদি এমন কোনো বর্ণ উচ্চারণ করেন থাকেন যে বর্ণটি উচ্চারণে গরম হাওয়া বার হয় সেই বর্ণ গুলিকে আমরা উষ্ম বর্ণ বলি। যেমন : শ, ষ, স, হ.
অযোগ বর্ণ : যে বর্ণ গুলি নিজে উচ্চারিত না হয়ে অন্য কোনো বর্ণ কে উচ্চারিত হতে ভাগ নেয় তাকে অযোগ বর্ণ বলা হয়। উহারণ হলো : ং, ঃ
অন্তঃস্থ বর্ণ : যে বর্ণ গুলি সমস্ত বর্ণের মাজে থাকে তাকে আমরা অন্তঃস্থ বর্ণ বলি। যেমন : য, র, ল, ব.
বাংলা ভাষার ব্যঞ্জনবর্ণকে শিখতে গেলে সবার প্রথম ধাপ, যেগুলো আমরা পড়ে থাকি :
বর্ণ | ব্যঞ্জনবর্ণ |
---|---|
ক | কাকাতুয়া কাকাতুয়ার মাথায় ঝুঁটি। |
খ | খ্যাঁকশিয়ালি খ্যাকশিয়ালি পালায় ছুটি |
গ | গোরু বাছুর দাঁড়িয়ে আছে। |
ঘ | ঘুঘু পাখি ডাকছে গাছে। |
ঙ | নৌকা, মাঝি ব্যাঙ। |
চ | চিতাবাঘের সরু ঠ্যাং। |
ছ | ছাগল ছানা লাফিয়ে চলে। |
জ | জাহাজ ভাসে সাগর জলে। |
ঝ | ঝাড় ঝাড়ু হাতে এল কানাই। |
ঞ | ঞ চড়ে নাচছে দু-ভাই। |
ট | টিয়াপাখির ঠোটটি লাল। |
ঠ | ঠাকুরদাদার শুকনো গাল। |
ড | ডুলি কাঁধে বেহারা যায়। |
ঢ | ঢুলি-ভায়া ঢোলক বাজায়। |
ণ | মূর্ধন্য ণ নাকের পরে। |
ত | তিমি আপন শিকার ধরে। |
থ | থালা ভরা আছে মিঠাই। |
দ | দোয়াত আছে, কালি নাই। |
ধ | ধোপা কেমন কাপড় কাচে। |
ন | নাপিত-ভায়া দাড়ি চাচে। |
প | পাখির বাসা হাওয়ায় নড়ে। |
ফ | ফোয়ারা হতে জল পড়ে। |
ব | বুলবুলিটির মুখটি কালো। |
ভ | ভালুক জানে নাচতে ভালো। |
ম | মফর ময়ূর ময়ূর নাচে পেখম ধরে। |
য | যাঁতা ঘোরে হাতের জোরে। |
র | রাজহাসটির গলা সরু। |
ল | লাঠির চোটে পালায় গোরু। |
ব | বাঘের যত সাহস চোখে। |
শ | শকুন শকুন কাঁদে গরুর শোকে। |
ষ | ষাঁড় ছুটেছে পুকুর পাড়ে। |
স | সিংহ রাগে কেশর নাড়ে। |
হ | হাসিমুখ হাসিমুখটি দেখতে বেশ। |
ড় | ড়-এর দফা হল শেষ। |
ঢ় | ঢ়-এর মাথা কামড়ে খায়। |
য় | য় দেখে ভয়ে পালায়। |
ৎ | ৎ ঐ পুষির গায়। |
ং | অনুস্থান-টি হারিয়ে যায়। |
ঃ | বিসর্গ এর কুঁড়ো পেট। |
ঁ | চন্দ্রবিন্দু এর মাথা হেঁট। |
আরো জানুন : ব্লগ বা ওয়েবসাইট মানে কি?
স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণের মধ্যে পার্থক্য :
স্বরবর্ণ
- এটা প্রকাশক ও সাঙ্কেতিক চিহ্নই।
- এটি নিজে নিজেই উচ্চারিত হতে পারে।
- উচ্চারণের সময় মুখগহ্বরের কোথাও বাধা পায় না।
- এটির দৃশ্য ও শ্রতিস্বরূপ আছে।
ব্যঞ্জনবর্ণ
- এটিও প্রকাশক ও সাঙ্কেতিক চিহ্নই।
- স্বরবর্ণের সাহায্য ছাড়া উচ্চারিত হতে পারে না।
- উচ্চারণের সময় মুখগহ্বরের বাধা বা ঘর্ষণ হয়।
- এটির দৃশ্যরূপ আছে কিন্তু শ্রুতিরূপ নেই।
অ আ কত টি?
অ আ থেকে ঔ পর্যন্ত বারোটি যেটি হলো স্বরবর্ণ আর ক, খ থেকে ঁ পর্যন্ত ৪০ টি, এগুলোকে ব্যঞ্জনবর্ণ বলা হয়।
স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ লেখক কে?
স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ লেখক হলেন “ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর” যিনি ছোটদের জন্য এই বর্ণপরিচয় বইটি লেখেন এবং এটি রাহ্মীলিপি থেকেই বিবর্তিত, তিনি একজন ভারতের বাসিন্দা।
মাত্রাহীন স্বরবর্ণ কয়টি?
বাংলা বর্ণমালায় মোট ১০ টি সংখ্যা হলো মাত্রাহীন স্বরবর্ণ, সেগুলি হলো – ৯, এ,ঐ,ও, ঔ, ঞ, ঙ, ৎ,ং, :, ঁ.
অর্ধমাত্রাযুক্ত স্বরবর্ণ কয়টি?
বাংলা বর্ণমালায় ১ টি সংখ্যা হলো অর্ধমাত্রাযুক্ত স্বরবর্ণ, সেটি হলো “ঋ”.
উপসংহার :
আশা করি আপনি স্বরবর্ণ ও ব্যঞ্জনবর্ণ সম্পর্কে সমস্ত বিষয়ে বুঝতে পেরেছেন? যদি বুজতে পেরে থাকেন তাহলে পোস্টি সম্পূর্ণ পড়ুন। আর যদি আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্ট বক্সে আমাকে জানান, আমি আপনাকে অবশ্যয় help করবো।