india women vs pakistan women

কেন ভারত-পাকিস্তান মহিলা ক্রিকেট প্রতিদ্বন্দ্বিতা আজও বিশ্বজুড়ে এত উত্তেজনাময়?

ভারত মহিলা ক্রিকেট, পাকিস্তান মহিলা ক্রিকেট, মহিলা বিশ্বকাপ ২০২৫, IND-W vs PAK-W রেকর্ড, ১২-০, করমর্দন বিতর্ক, ফাতিমা সানা, হারমানপ্রীত কৌর।

কলম্বোর সবুজ পিচে যখন দুটো দল মুখোমুখি হয়, তখন খেলাটা শুধু ক্রিকেট থাকে না—সেটা পরিণত হয় এক প্রতীকী দ্বৈরথে।

সম্প্রতি আইসিসি মহিলা বিশ্বকাপ ২০২৫-এ ভারত এবং পাকিস্তানের (India Women vs Pakistan Women) মধ্যকার সর্বশেষ ম্যাচটিও তার ব্যতিক্রম নয়। পরিসংখ্যান বলছে, ওডিআই ফরম্যাটে ভারতের ১২-০-এর অপ্রতিরোধ্য আধিপত্যের কারণে এই ম্যাচকে ‘প্রতিদ্বন্দ্বিতা‘ (Rivalry) বলা ভুল । তবু, এই ম্যাচ কেন এত গুরুত্বপূর্ণ? কারণ, এই লড়াইয়ের পটভূমি তৈরি হয় মাঠের বাইরে, যেখানে রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং এক ঐতিহাসিক বিতর্ক—’করমর্দন নিষিদ্ধ‘-এর প্রথা—ক্রিকেটীয় দক্ষতার চেয়েও বেশি মনোযোগ আকর্ষণ করে ।  

এই ব্লগে আমরা সেই পরিসংখ্যানের দেওয়াল, মাঠের বাইরের নাটক এবং ২০২৫ বিশ্বকাপের সর্বশেষ ম্যাচের মুহূর্তগুলো বিশ্লেষণ করব, যা এই দ্বৈরথকে আজও ‘অবশ্যই দ্রষ্টব্য‘ করে রেখেছে।

hk

১. রাজনৈতিক ছায়া ও একটি নিষিদ্ধ করমর্দন:

নাটক শুরু টসের আগে যদি খেলার মাঠে ভারত-পাকিস্তানের মহিলাদের লড়াই একপেশে হয়, তবে মাঠের বাইরে তা চরম নাটকীয়। সাম্প্রতিক কূটনৈতিক উত্তেজনার কারণে নারী দলগুলোকেও এখন বৃহত্তর রাজনৈতিক বক্তব্যের অংশ হতে হচ্ছে ।

পুরুষ দলের এশিয়া কাপের বিতর্কের (ট্রফি বর্জন এবং করমর্দন না করা) পথ অনুসরণ করে, বোর্ড অফ কন্ট্রোল ফর ক্রিকেট ইন ইন্ডিয়া (BCCI) মহিলা দলকেও নির্দেশনা দেয় যে তারা যেন পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের সাথে প্রথাগত ম্যাচ-পরবর্তী করমর্দন এড়িয়ে চলে ।

কলম্বোর টস বিতর্ক, যা হলো ভাইরাল:

এই নির্দেশনার প্রভাব দেখা যায় বিশ্বকাপ ২০২৫-এর টসের সময়। ভারতের ক্যাপ্টেন হারমানপ্রীত কৌর এবং পাকিস্তানের ক্যাপ্টেন ফাতিমা সানা করমর্দন তো করলেনই না, এমনকি সৌজন্য বিনিময়ও করেননি ।

তবে বিতর্কের জন্ম দেয় অন্য একটি ঘটনা। টসের সময় পাকিস্তানের ক্যাপ্টেন ফাতিমা সানা ‘টেলস’ ডাকেন, কিন্তু ম্যাচ অফিসিয়াল ভুলবশত ‘হেডস’ ঘোষণা করেন এবং পাকিস্তানকে টস জেতানো হয়! সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয়, ফাতিমা সানা কোনো প্রতিবাদ না করে টস গ্রহণ করেন এবং বোলিং বেছে নেন। টসের এই ভুল-বোঝাবুঝির ভিডিও দ্রুত সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায় । এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, ম্যাচের ফলাফল যাই হোক না কেন, ভারত-পাকিস্তান লড়াই মানেই তা একটি ‘ভাইরাল’ আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু।

২. পরিসংখ্যানের সেই দুর্ভেদ্য দেওয়াল

ভারত-পাকিস্তান মহিলা ক্রিকেটের এই গল্পটি পরিসংখ্যানের দিক থেকে প্রায় অবিশ্বাস্য। ওয়ানডে ইন্টারন্যাশনাল (ওডিআই) ফরম্যাটে ভারতের রেকর্ড একেবারে নিখুঁত ।

ফরম্যাটমোট ম্যাচভারত জয়ীপাকিস্তান জয়ীভারতের সাফল্যের %
ওডিআই১২১২১০০%
টি-টোয়েন্টি১৬১৩৮১.২৫%
মোট২৮২৫~৮৯.৩%
hj

ওডিআই ফরম্যাটের চরম আধিপত্য:

  • অজেয় রেকর্ড: ২০০৫ সাল থেকে শুরু করে সর্বশেষ বিশ্বকাপ ২০২৫-এর জয় পর্যন্ত—ওডিআইতে ভারত ১২টি ম্যাচের সবকটিতেই জিতেছে ।  
  • ঐতিহাসিক পারফরম্যান্স: এই দ্বৈরথের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত স্কোরটি ভারতের জয়া শর্মার—১৩৮* রান (করাচি, ২০০৫) ।  
  • লজ্জার রেকর্ড: পাকিস্তানের সর্বনিম্ন স্কোর মাত্র ৫৭ রান (২০০৯ বিশ্বকাপ, বওরাল), যা ভারত মাত্র ১০ ওভারে তাড়া করে ।  
  • বোলিংয়ের দাপট: ভারতের একতা বিস্ত ৫ রানে ৮ উইকেট নিয়েছিলেন (কলম্বো, ২০১৭) ।

অন্যদিকে, পাকিস্তানের জন্য সবচেয়ে বেদনাদায়ক তথ্য হলো—এখন পর্যন্ত কোনো পাকিস্তানী ব্যাটসম্যানই ভারতের বিপক্ষে ওডিআইতে সেঞ্চুরি করতে পারেননি ।  

টি-টোয়েন্টি: পাকিস্তানের একমাত্র স্বস্তির শ্বাস

পাকিস্তান কেবল সংক্ষিপ্ত ফরম্যাট টি-টোয়েন্টিতে তিনটি জয় পেয়েছে । সর্বশেষ জয়টি ছিল ২০২২ সালের টি-টোয়েন্টি এশিয়া কাপে, যেখানে অলরাউন্ডার নিদা দার-এর অল-রাউন্ড পারফরম্যান্সে ভারত ১৩ রানে পরাজিত হয় । এই তিনটি জয়ই পাকিস্তানের খেলোয়াড়দের মনে আশা বাঁচিয়ে রাখে ।

৩. শেষ লড়াইয়ের বিশ্লেষণ (বিশ্বকাপ ২০২৫, কলম্বো)

কলম্বোর সর্বশেষ ম্যাচটি ছিল এই দ্বৈরথের এক ক্ষুদ্র প্রতিচ্ছবি। একদিকে রাজনৈতিক নাটক, অন্যদিকে পাকিস্তানের কঠিন প্রতিরোধ, এবং শেষমেশ ভারতের অভিজ্ঞতার কাছে আত্মসমর্পণ।

ভারতের ঘুরে দাঁড়ানো:

টস বিতর্কের পর পাকিস্তান প্রথমে বোলিং বেছে নেয়। পাকিস্তানের পেসার ডায়ানা বেইগ ৪ উইকেট নিয়ে ভারতকে চাপে রাখলেও , হারলিন দেওল (৪৬) এবং রুকি রিচা ঘোষের (৩৫* রান, ২০ বলে ২ ছক্কা সহ) ঝোড়ো ফিনিশিং-এ ভারত ২৪৭ রানের প্রতিযোগিতামূলক স্কোর গড়ে তোলে । মিডল অর্ডার থেকে লোয়ার অর্ডার পর্যন্ত এই লড়াকু মানসিকতাই ভারতের বড় শক্তি ।  

পাকিস্তানের লড়াই এবং পতন:

জবাবে পাকিস্তান শুরুতেই ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়লেও, ওপেনার সিদরা আমিন (Sidra Amin) দৃঢ়তা দেখান। তিনি ১০৬ বলে ৮১ রান করে একাই ভারতের পরীক্ষা নিচ্ছিলেন । বিশেষজ্ঞদের মতে, সিদরা আমিনের উইকেটটি ছিল পাকিস্তানের ‘শেষ আশা’ । শেষ পর্যন্ত, ভারতের বোলিং ইউনিটের নিয়ন্ত্রিত পারফরম্যান্সের কাছে পাকিস্তান ১৫৯ রানে অলআউট হয়। ভারত ৮৮ রানের বিশাল জয় তুলে নেয় ।  

মাঠের নায়ক:

এই ম্যাচে ভারতের উদীয়মান তারকা ক্রান্তি গৌড় (Kranti Gaud) নজর কাড়েন, যিনি মাত্র ২০ রান খরচ করে ৩ উইকেট নেন এবং ‘প্লেয়ার অফ দ্য ম্যাচ’ নির্বাচিত হন । এমনকি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তিনি ক্যাপ্টেন হারমানপ্রীত কৌরকে অনুরোধ করে দ্বিতীয় স্লিপে ফিল্ডার রাখেন এবং সফল হন, যা তার আত্মবিশ্বাস ও পরিণত মানসিকতার পরিচয় দেয় ।

জানুন : কেন প্রেম ভাঙার পরামর্শ বন্ধ করল ChatGPT!

৪. কেন এমন একপেশে? এবং ভবিষ্যতের পথ

ভারত-পাকিস্তানের খেলার মানের এই বিশাল পার্থক্য কেন? কারণ স্পষ্ট—ভারতের গভীরতা (Squad Depth) এবং মানসিক স্থিতিস্থাপকতা (Resilience) ।  

  • ভারতের শক্তি: স্মৃতি মন্ধানা (বিশ্বের অন্যতম সেরা ওডিআই ব্যাটার) , দীপ্তি শর্মা (অলরাউন্ডার) , এবং শক্তিশালী স্পিন আক্রমণ (দীপ্তি শর্মা, স্নেহ রানা, রাধা যাদব) ভারতীয় দলকে যেকোনো পরিস্থিতিতে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা দেয় ।
  • পাকিস্তানের চ্যালেঞ্জ: পাকিস্তান প্রধানত সিদরা আমিন এবং নিদা দার-এর মতো অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত নৈপুণ্যের ওপর নির্ভর করে। ক্যাপ্টেনের কাঁধে ঐতিহাসিক ১২-০-এর রেকর্ড ভাঙার চাপ থাকে ।

এই ম্যাচের আকর্ষণ ক্রিকেটের মান দিয়ে নয়, বরং আবেগ, ইতিহাস এবং রাজনৈতিক উত্তেজনা দ্বারা নির্ধারিত হয়। যতদিন এই দ্বৈরথে মাঠের বাইরের এই নাটক থাকবে, ততদিন ফলাফল যাই হোক না কেন, ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ বিশ্বজুড়ে দর্শককে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখবে।

আরো পোস্ট পড়ুন :-

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।