ভারতীয় বিজ্ঞান ও শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে ইনকাম

ভারতীয় বিজ্ঞান ও শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে ইনকামের উপায়

আপনি যদি IISER-এ থাকেন বা IISER গ্র্যাজুয়েট/রিসার্চার হলে আপনি শুধু বিজ্ঞান শেখেন না। এখানকার দক্ষতা, ল্যাব সুবিধা এবং যোগাযোগের সুযোগগুলোকে কাজে লাগিয়ে ভালো আয়ও করা সম্ভব। নিচে বাংলা ভাষায় একটি প্র্যাকটিক্যাল, ধাপে ধাপে গাইড দিলাম যেটি একটা ছাত্র, পিএইচডি-শিক্ষার্থী, পোস্টডক বা ফ্যাকাল্টি, যে কেউ এটি অনুসরণ করে বাস্তবে আয় শুরু করতে পারবেন।

IISER-এ আয়ের প্রধান পথগুলো: স্কলারশিপ/ফেলোশিপ, রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্স/টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ, ইন্ডাস্ট্রি কল্যাব, কনসালটেন্সি ও কন্ট্রাক্ট রিসার্চ, ইনকিউবেশন/স্টার্ট-আপ, পেটেন্ট ও লাইসেন্সিং, অনলাইন কোর্স ও টিউশন, ফ্রিল্যান্স সায়েন্স রাইটিং ও কনটেন্ট, ওয়ার্কশপ/ট্রেনিং, সায়েন্স কমিউনিকেশন ও মিডিয়া।

কেনইবা IISER থেকে আয় করা সুবিধাজনক?

  1. ল্যাব ও সরঞ্জাম: উচ্চমানের ল্যাব, ব্যয়বহুল যন্ত্রপাতি গুলো দিয়ে আপনি প্রোজেক্ট-ভিত্তিক সার্ভিস, টেস্টিং বা কনসালটেন্সি শুরু করতে পারেন।
  2. জ্ঞানের গভীরতা: গবেষণা-দক্ষতা ও বিশেষায়িত জ্ঞান সাথে ইন্ডাস্ট্রি প্রোজেক্ট বা স্টার্ট-আপে সুবিধা।
  3. নেটওয়ার্ক: শিক্ষক, আলামনাই, সহপাঠীর সাথে সহযোগিতার সুযোগ বেশি।
  4. ইনকিউবেশন সাপোর্ট: অনেক IISER-এ স্টার্ট-আপ/ইনকিউবেটর সেবা উপলদ্ধ আছে। যেমন;(মেন্টরিং, গ্রান্ট অ্যাক্সেস)।

জানুন: অনলাইনে অর্থ উপার্জনের ১০ টি উপায়।

ধাপে ধাপে সমস্ত গাইড

১. নিজেকে যাচাই করুন

আপনার স্ট্রেংথ নির্ধারণ করুন: যেমন কোডিং? বায়ো-ল্যাব? ডাটা অ্যানালাইসিস? অথবা সায়েন্স রাইটিং?

দরকারী পোর্টফোলিও তৈরি করুন: বুমার পেপার, প্রোজেক্ট সামারী, GitHub/Google Drive লিংক, স্যাম্পল রিপোর্ট বা আর্টিকেল ফরম্যাটে।

সময় মূল্যায়ন করুন: পড়াশোনা কতটুকু ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা নির্ধারণ করুন সাতে আপনার পরবর্তী সিদ্ধান্তগুলোর ওপর এটি কতটা নির্ভর করবে।

২. তাত্ক্ষণিক আয়ের পথ

রিসার্চ অ্যাসিস্ট্যান্টশিপ/টিচিং অ্যাসিস্ট্যান্ট: বিভিন্ন বিভাগের বিজ্ঞপ্তি দেখুন; সাথে ছোট টুকু-অ্যাসাইনমেন্ট নেওয়া যায় কিনা সেটা দেখুন।

টিউশন/অনলাইন টিউটরিং: কোর্স তৈরি করে Unacademy, Byju’s, Coursera/Udemy (ইন্ডিপেন্ডেন্ট) বা ব্যক্তিগত টিউশন শুরু করতে পারেন।

ফ্রিল্যান্সিং (ডাটা, কোড, রাইটিং): Upwork/Fiverr–এ সায়েন্স রাইটিং, ডাটা অ্যানালাইসিস, পিপট/গ্রাফ তৈরি ইত্যাদি অফার করুন।

কন্ট্রাক্ট ল্যাব-ওয়ার্ক: বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে ছোট-খাটো টেস্টিং/প্রসেসিং কাজ গ্রহণ করুন। (ইথিক্যাল/ইনস্টিটিউশনাল নীতিমালা মেনে চলুন)

৩. মাঝারি সময়ের প্রকল্প

ইন্ডাস্ট্রি কল্যাবোরেশন: আপনার সুপারভাইজার বা ডিপার্টমেন্টের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ইন্ডাস্ট্রি-ফান্ডেড প্রোজেক্টে অংশ নিন।

গবেষণা গ্রান্ট/ফান্ডিং: জাতীয় গবেষণা স্কিম (SERB, DST, UGC ইত্যাদি) বা ইনস্টিটিউশনাল গ্রান্টে প্রপোজাল লিখুন সাথে আপনি ছোট স্কোপের প্রোজেক্ট থেকে শুরু করুন।

কনসালটেন্সি সার্ভিস: স্থানীয় শিল্পে ছোট-খাটো পরামর্শ (quality control, data analysis, assay development) দিন।

ওয়ার্কশপ ও ট্রেনিং করানো: টেকনিক্যাল ওয়ার্কশপ (Python for Scientists, Wet Lab Techniques) আয়োজন করে টিকিট বিক্রি করুন।

পড়ুন: এআই থেকে মাসে লাখ টাকা উপার্জনের উপায়।

৪. লম্বা সময়/বৃহৎ আয়

স্টার্ট-আপ/স্পিন-অফ: যদি আপনার রিসার্চের কমার্শিয়াল সম্ভাবনা থাকে, তাহলে আপনি ইনকিউবেটরে গিয়ে স্টার্ট-আপ শুরু করুন। ব্যাবসায়িক পরিকল্পনা (B-plan) করুন, এবং পাইলট ডেমো তৈরি করুন।

পেটেন্ট ও লাইসেন্সিং: প্রযুক্তি পেটেন্ট করুন; পরে শিল্পকে লাইসেন্স করুন বা টেক-ট্রান্সফার এর মাধ্যমে আয় করুন।

বড়-স্কেল ইন্ডাস্ট্রি প্রজেক্ট: শিল্পের সাথে বড় কন্ট্রাক্ট নিন এবং আপনি সেই কন্ট্রাক্ট রিসার্চ, টেকনিক্যাল সাপোর্ট, ক্লিন-রুম সেবা ইত্যাদি।

বই/কোর্স সিরিজ/মুদ্রিত রিসোর্স বিক্রি: নিজের লেখা প্রশিক্ষণ মডিউল বা গাইড বিক্রি করুন বিভিন্ন মাধ্যমে।

সফলতার টিপস ও কৌশল

  • মেন্টরের সঙ্গে কথা বলুন: প্রোজেক্ট/শর্তে আপনার সার্বিক লক্ষ্য ও সময় সামঞ্জস্য করুন।
  • লিগ্যাল এবং ইনস্টিটিউশনাল নীতি মানুন: কনফ্লিক্ট-অফ-ইন্টারেস্ট, আইপি নীতিমালা ইত্যাদি জানুন।
  • ছোট থেকে শুরু করুন: প্রথমে ছোট, দ্রুত রিটার্ন প্রকল্প নিন এতে করে আপনার ভবিষ্যতে বড় প্রোজেক্টে প্রবেশ করা সহজ হবে।
  • প্রফেশনাল পিচ ডেক তৈরি করুন: ৫–১০ স্লাইডে সমস্যা, সমাধান, মার্কেট, টীম, বাজেট মেনেজ করতে শিখুন।
  • টাইম ম্যানেজমেন্ট কঠোর রাখুন: পড়াশোনা বাদ যেন না পড়ে সেটার জন্যও আপনার প্রাইওরিটি ক্লিয়ার রাখুন।
  • রেকর্ড রাখুন: ইনকাম-এক্সপেন্স ট্র্যাক করুন, ট্যাক্স সম্পর্কে বেসিক ধারণা রাখুন।

দ্রুত চেকলিস্ট পাতায়

  • নিজে দক্ষতার একটি তালিকা তৈরি করুন।
  • পোর্টফোলিও এর জন্য ১-পেজ সারমারি তৈরি করুন।
  • তাত্ক্ষণিক আয়ের জন্য টিউশন বা ফ্রিল্যান্সিং শুরু করুন।
  • ৩ মাসের মধ্যে একটি ইন্ডাস্ট্রি-মাইন্ডেড প্রোজেক্ট খুঁজুন।
  • ৬ মাসে একটি প্রশিক্ষণ ও ওয়ার্কশপ আয়োজন করুন।
  • ১ বছর পর্যায়ে পেটেন্ট/ইনকিউবেশন-মডেল বিবেচনা করুন।

পড়ুন: সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্রিল্যান্সিং কাজগুলো সম্পর্কে।

শেষ কথা

IISER-এ থাকা মানেই আপনি জড়িত রয়েছেন এক শক্তিশালী সায়েন্টিফিক কমিউনিটিতে। তাই আপনার জ্ঞানকে পণ্যিকরণ করা কঠিন মনে হতে পারে, কিন্তু ধাপবিশেষে ছোট থেকে শুরু করল আপনিও টেঁকনোলজি-ফোকাসড স্টার্ট-আপ, কনসালটেন্সি বা অনলাইন শিক্ষা মতো সবই বাস্তবে সম্ভব। তাই আপনি পরিকল্পিতভাবে কাজ করুন, ইনস্টিটিউশনাল রিসোর্সকে স্মার্টভাবে ব্যবহার করুন এবং নেটওয়ার্ক-বিল্ডিং কখনো বন্ধ করবেন না, তাহলে আপনি সহজে এগিয়ে যেতে পারবে।

আরো পোস্ট পড়ুন :-

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।