ফ্রিল্যান্সিং কি ও ফ্রিল্যান্সিং করে সর্বোচ্চ মাসে কত টাকা ইনকাম করা যায়

ফ্রিল্যান্সিং কি ও ফ্রিল্যান্সিং করে সর্বোচ্চ মাসে কত টাকা ইনকাম করা যায়

আমরা সকলেই জানি ফ্রিল্যান্সিং করে এখন অনেকে অনেক টাকা ইনকাম করছে। আমরা সেটি অনলাইনে প্রায় দেখে থাকি। সেই কারণে আমাদের মনেও আগ্রহ জাগে। যে কিভাবে আমিও ফ্রিল্যান্সিং করে অনলাইন থেকে টাকা ইনকাম করতে পারব সেই বিষয়ে জানার জন্য।

তাই আপনিও যদি একজন ফ্রিল্যান্সার হতে চান, এবং ফ্রিল্যান্সিং করে টাকা ইনকাম করতে চান। এবং আপনি ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে কিছু না জেনে থাকেন। তাহলে এই নিবন্ধনটি সম্পূর্ণ পড়ুন। আর এখনই জেনে নিন ফ্রিল্যান্সিং কি? ফ্রিল্যান্সিং থেকে কত টাকা ইনকাম করা যায়, ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে করা যায় ও আরো অন্যান্য বিষয়ে। যেগুলো জানার পরে আপনি খুব সহজেই ফ্রিল্যান্সিং করে টাকা ইনকাম করা শুরু করে দিতে পারবেন।

তাই চলুন আমরা বেশি কথা না বলে জেনে নিই ফ্রিল্যান্সিং এর বিস্তারিত বিষয়গুলি সম্পর্কে।

ফ্রিল্যান্সিং কি?

ফ্রিল্যান্সিং হলো অনলাইনে এর মাধ্যমে কাউকে কোন কাজ করে দিয়ে সেই কাজের বদলে টাকা ইনকাম করা টাকে বলা হয় ফ্রিল্যান্সিং। উদাহরণস্বরূপ, যেমন; ধরুন আমার একটি ওয়েবসাইট তৈরি, লোগো তৈরি বা আমার আমার ব্যবসার জন্য একটি এক্সএল শিট তৈরি করতে হবে। তো সে ক্ষেত্রে আমার হাতে খুবই সময় কম।

সেই কারণে আমি এমন কাউকে খুঁজবো যে এই কাজগুলো করে দেয় এবং সে এই কাজের জন্য একজন দক্ষ ব্যক্তি। ফলে তার কাছে আমি আমার এই কাজগুলোকে দিয়ে দেব। সুতারং সে আমার কাজগুলোকে করে দিলে আমি তাকে টাকাটি দেবো।

এবার সেই ব্যক্তিটা হলেন আপনি। ফলে আপনার যে কাজে দক্ষতা আছে আপনি সেই কাজগুলো অনলাইনের মাধ্যমে দেশে ও বিদেশে কাস্টমারের সাথে কাজ করে একটি ভালো পরিমানে টাকা আয় করবার অন্যতম উপায়।

ফ্রিল্যান্সিং কিভাবে করা যায়?

ফ্রিল্যান্সিং করাটি খুবই সহজ। ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য সবার প্রথমে আপনাকে অনলাইন সম্বন্ধে যত কাজ আছে। তার মধ্য থেকে যেকোনো একটি কাজে খুব ভালো দক্ষতা দরকার। তারপর আপনি ফাইবার, Upwork ও ফ্রিল্যান্সার ডটকম এর মত ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে আপনার একটি একাউন্ট তৈরি করে সেখানে আপনার জানা কাজের সম্পর্কে দুটো তিনটে গিগ বা পোস্ট তৈরি করুন। সাথে আপনি আপনার কাজের জন্য কত টাকা চার্জ করেন সেটি লিখে পাবলিশ করে দিন।

তারপরে প্রতিনিয়ত আপনি যে প্ল্যাটফর্মটিতে একাউন্ট তৈরি করবেন বা করেছেন সেখানে সবসময় অনলাইন থাকার চেষ্টা করুন। ফলে আপনার গিগুলো বেশি বেশি করে দর্শকদের কাছে প্রদর্শিত হবে। ফলে যাদের ওই কাজটি করানোর প্রয়োজন হবে। তারা আপনার সাথে যোগাযোগ করবে। এবং আপনি ওই কাজটি করিয়ে দিলে আপনাকে তারা সেই টাকাটি দিয়ে দেবে। এবং সেই টাকাটি আপনি আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে তুলে নিতে পারবেন। এইভাবে সহজেই ফ্রিল্যান্সিং করা যায়।

কিভাবে একজন ফ্রিল্যান্সার হওয়া যায়

ফ্রিল্যান্সার হওয়ার জন্য সবার প্রথমে আপনাকে কোন একটি কাজের দক্ষতার প্রয়োজন হবে। তাই আপনার যদি কোন দক্ষতা না থেকে থাকে। তাহলে আপনি ইউটিউব থেকে কোন একটি বিষয়কে নির্বাচন করে তার উপরে ন্যূনতম জ্ঞান অর্জন করুন। তারপরে আপনি ইউডামি ও কোর্সার মত প্ল্যাটফর্ম থেকে সেই বিষয়ে একটি কোর্স কিনে ভালো করে জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন করে নিন। তারপরে আপনি ফাইবার ও আপওয়ার্কের মতো ফ্রিল্যান্সিং প্ল্যাটফর্মে একটি একাউন্ট তৈরি করে সেখানে আপনার কাজ বা দক্ষতাকে বিক্রয়ই করে অনলাইন থেকে ইনকাম করুন।

ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ করতে কি কি প্রয়োজন হয়

ফ্রিল্যান্সিং কাজ করার জন্য শুধুমাত্র আপনার কোনো একটা কাজের বিষয়ে ভালো দক্ষতার প্রয়োজন। এছাড়া আপনার কাছে একটি কম্পিউটারইন্টারনেট কানেকশন এবং অনলাইন ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে জ্ঞান থাকলেই হবে। আর অন্য কোন কিছুর প্রয়োজন নেই. না লাগবে আপনার স্কুল সার্টিফিকেট, না লাগবে আপনার জন্ম সার্টিফিকেট, বা আপনার আধার কার্ড। শুধু আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নাম্বারটি লাগবে আপনার টাকাটি আপনার একাউন্টে তুলে নেওয়ার জন্য।

ফ্রিল্যান্সিং করে সর্বোচ্চ মাসে কত টাকা ইনকাম করা যায়

ফ্রিল্যান্সিং করে মাসে সর্বোচ্চ কত ইনকাম করা যায় এটা বলা অসম্ভব ব্যাপার। কারণ এক এক জনের এক এক রকম টাকা ইনকাম করে থাকেন। তবু উদাহরণস্বরূপ আমার জানা একটি ওয়েব ডেভলপার যিনি তার টিম নিয়ে কাজ করে থাকেন এবং মাসে তিনি ৮০ থেকে ৮৫ লাখ টাকা ইনকাম করে। তবে আপনি যদি একা ভালোভাবে কাজ করেন। তাহলে আপনি প্রতি মাসে অনায়াসে দুই থেকে তিন লাখ টাকা ইনকাম করতে পারবেন।

তবে এমনও অনেক লোক আছেন যারা ফ্রিল্যান্সিং করে মাসে সর্বোচ্চ ২০০০ টাকা পর্যন্ত ইনকাম করতে পারে না। সেই কারণে অবশ্যই আমি আপনাকে সবসময় বলবো আপনি যে কাজটি করতে চান না কেন। সেই কাজটির উপরে ভালো করে অভিজ্ঞতা অর্জন করে নিয়ে কাজটি শুরু করুন। তাহলে দেখবেন আপনিও একদিন মাসে দুই থেকে চার লাখ টাকা ইনকাম করতে পারবেন। ও নিজের একটা টীম তৈরী করতে পারবেন।

ফ্রিল্যান্সিং কে বা কারা করতে পারে

ফ্রিল্যান্সিং সবাই করতে পারে। ফ্রিল্যান্সিং করার জন্য কোন সার্টিফিকেট বা কোন ডকুমেন্টস এর প্রয়োজন হয় না। এখানে শুধুমাত্র প্রয়োজন হয় আপনার অভিজ্ঞতা।

তাই আপনার যদি অভিজ্ঞতা থেকে থেকে এবং আপনি যদি একজন টোটো চালক বা ভ্যান চালক হয়ে থাকেন। তাহলেও আপনি ফ্রিল্যান্সিং করতে পারবেন। এবং অনলাইন থেকে খুব সহজেই ফ্রিল্যান্সিং করে ইনকাম করতে পারবেন।

তাই আপনি যদি একজন বাবা, মা, ভাই, বোন, বা ঘরের বউ হন না কেন আপনার যদি কোন একটি বিষয়ে ভালো অভিজ্ঞতা থাকে। তাহলে অবশ্যই আপনি আজকে থেকে ফ্রিল্যান্সিং করা শুরু করুন। আশা করছি আপনি অনেক এগিয়ে যাবেন।

ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য কি কি কাজ উপলব্ধ আছে

ফ্রিল্যান্সিং এর জন্য অনলাইনে এক হাজারেরও বেশি কাজ উপলব্ধ আছে। যেমন; উদাহরণস্বরূপ ওয়েবসাইট ডিজাইন, লোগো ডিজাইন, ভিডিও এডিটিং, এসিও, ভাষা ট্রান্সলেট, ডাটা এন্ট্রি, ফটোশপ, অ্যাপ ডেভেলপার, গ্রাফিক্স ডিজাইনার।

এছাড়ো আরো অনেক কাজ উপলব্ধ আছে যেগুলো দেখার জন্য আপনি সরাসরি ফাইবার বা আপওয়ার্ক এর ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে দেখতে পারেন। তারপরে আপনি আপনার পছন্দের কাজটি নির্বাচন করে সেখানে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করে সেই কাজটি অনলাইনের মাধ্যমে বিক্রি করতে পারেন।

ফ্রিল্যান্সিং এর সুযোগ-সুবিধা ও চ্যালেঞ্জেস কি

ফ্রিল্যান্সিং এ সুযোগ-সুবিধা অনেক আছে। তবে চ্যালেঞ্জ অনেক আছে। যেমন;

সুবিধা

  • আপনি বাড়ি কিংবা অন্য কোথাও বসে অনলাইনের মাধ্যমে কাজটি করতে পারবেন।
  • অল্প কাজ করে অনলাইনের মাধ্যমে বেশি টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
  • ফ্রিল্যান্সার হওয়ার জন্য শুধু অভিজ্ঞতার প্রয়োজন কোন সার্টিফিকেটের প্রয়োজনই হয় না।
  • ফ্রিল্যান্সিং এর মাধ্যমে প্রচুর টাকা ইনকাম বা আপনার স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব।

চ্যালেঞ্জেস

  • অনেক ক্ষেত্রে আপনার কাস্টমারের কাজটি পছন্দ না হলে আপনাকে খারাপ রেটিং বা রিপোর্ট দিতে পারে।
  • ফ্রিল্যান্সিং কাজের জন্য ইংরেজি জানাটা অত্যন্ত জরুরি যেটা অনেকের ক্ষেত্রে একটি চ্যালেঞ্জ।
  • নতুন শুরু করলে ফ্রিল্যান্সিং থেকে আয় করতে বা কাজ পেতে একটু সময় লাগতে পারে।

ফ্রিল্যান্সিং এর ভবিষ্যৎ কি

এখনকার ২০২৪ এর রেজাল্ট অনুযায়ী আগামী দিনে ফ্রিল্যান্সিং এর ভবিষ্যৎ সুদ্দুর ও উজ্জ্বল। কারণ এখন সকলেই চাই তার কাজটি অন্য কারো দিয়ে করিয়ে নিয়ে নিজের সময় বাঁচানোর চেষ্টা করে থাকেন।

এছাড়া বড় বড় ব্যবসায়ী এবং ছোটখাটো ব্যবসায়ীরা এই ফ্রিল্যান্সিং এর সাহায্য নিয়ে তাদের ব্যবসাকে উন্নতি করে থাকেন। তাই আপনিও আপনার কাজ বা অভিজ্ঞতাটাকে একটি ব্যবসায় হিসেবে শুরু করে সেটিকে নিজের একটি প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন। সেটা সম্পূর্ণ নির্ভর করবে আপনার উপরে।

কারণ আমি আগেই বলেছি আমার জানা এমন অনেক ফ্রিল্যান্সার বন্ধু আছেন তারা আগে একা কাজ করত। কিন্তু এখন তাদের সাথে চার থেকে পাঁচ জনা করে টিম এ কাজ করে। এবং তারা মাসে তিন থেকে চার লাখ টাকা ইনকাম করে থাকেন। তাহলে আপনি এবার ভেবে দেখুন ফ্রিল্যান্সিং এর ভবিষ্যৎ কেমন।

এছাড়া আপনি ফ্রিল্যান্সিং এর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আরো জানতে চাইলে কমেন্ট বক্সে বলতে পারেন। আমি এর উপরে আলাদা একটি নিবন্ধন নিয়ে আসবো। অন্যথায় আপনি ইউটিউব থেকে ফ্রিল্যান্সিং এর ভবিষ্যৎ সম্পর্কে জেনে নিতে পারেন।

শেষকথা;

এখনকার সময় ফ্রিল্যান্সিং করে ইনকাম করাটা খুব একটি সহজ ব্যাপার হয়ে উঠেছে। তাই আপনার কোন অভিজ্ঞতা থেকে থাকলে আপনি আজ থেকেই ফ্রিল্যান্সিং করে অনলাইন থেকে ইনকাম করা শুরু করে দিন। ফাইবার ও Upwork মতো প্ল্যাটফর্ম এর সাথে।

আমি আশা করি আপনি এই নিবন্ধনটি পড়ে ফ্রিল্যান্সিং কিফ্রিল্যান্সিং কিভাবে কাজ করে এবং কত টাকা ইনকাম করা যায় এই সমস্ত বিষয়ের উপরে আপনি সম্পূর্ণ ধারণা পেয়ে গেছেন। যদি পেয়ে থাকেন এবং এই নিবন্ধনটি আপনাকে ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করেতে ন্যূনতম সাহায্য করে থেকে থাকে। তাহলে এটি বেশি বেশি করে আপনার বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সাথে শেয়ার করে দিন। আর এরকম ধরনের আরও নতুন নতুন ইনকামের টিপসব্লগিং এর সম্পর্কে জানতে আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলটিতে যোগদান করুন। সাথে এই ওয়েবসাইটটিকে সাবস্ক্রাইব করে রেখে দিন। আর ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে কোন প্রশ্ন থাকলে কমেন্ট বক্সে জানান।

আরো পোস্ট পড়ুন :-