ফ্রিল্যান্সিং কাজ করার জন্য ক্লায়েন্ট কিভাবে পাব তার সহজ পদক্ষেপ

ফ্রিল্যান্সিং কাজ করার জন্য ক্লায়েন্ট কিভাবে পাব তার সহজ পদক্ষেপ

আমরা যারা অনলাইনে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে থাকি, তারা সকলেই AI টেকনোলজি আসার পরে অনেক চিন্তার মধ্যে ঢুকে গেছি, এবং তেমন ভাবে সেই কাজগুলো থেকে আর ইনকাম হচ্ছে না। তাই আমরা অনেকেই ফ্রিল্যান্সিং কাজ করার চিন্তাভাবনা করছি বা শুরু করে দিয়েছি।

কিন্তু যারা ফ্রিল্যান্সিং শুরু করে দিয়েছে, তারা জানে যে বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিং মার্কেটে প্রচুর পরিমাণে কম্পিটিটার হওয়ার কারণে আমরা সেখান থেকে ঠিকমতো কাজ পাই না বা ক্লাইন্ট খুঁজে পায় না। কারণ যারা আগে থেকেই ফ্রিল্যান্সিং করছিল তারা সকলেই ফাইবার আপওয়ার্ক এর মত প্লাটফর্ম থেকে কাজ পেয়ে তারা এখন নিজেদের একটা স্টার্টআপ বা কোম্পানি খুলে নিয়েছে। সুতরাং তাদের কাছে ম্যানপাওয়ার বেশি হওয়ায় এবং তাদের রেটিং ভালো থাকায় নতুন ফ্রীলান্সার দের, ক্লায়েন্ট এর কাছ থেকে কাজ পাওয়া খুব একটা কঠিন বিষয় হয়ে উঠেছে।

তাই এই নিবন্ধনে আমি নতুন ফ্রিল্যান্সারদের জন্য কিছু টিপস শেয়ার করেছি। যেগুলো অনুসরণ করে আপনি কিছু ক্লাইন্ট বা কাজ পেতে পারেন একদম ফ্রিতে।

ফ্রিল্যান্সিং কাজের ক্লায়েন্ট কিভাবে পাব?

বর্তমান বাজারে যারা নতুন ফ্রিল্যান্সিং এ যোগদান করে কাজ করা শুরু করেছেন, বা ইতিমধ্য ফাইবার বা Upwork এর মত প্ল্যাটফর্ম গুলিতে যোগদান করেছেন, কিন্তু তারা কোন ক্লায়েন্টের কাজ পাচ্ছেন না।

তারা সবার প্রথমে তাদের ফাইবার বা Upwork একাউন্টটিকে সম্পূর্ণভাবে ভেরিফিকেশন প্রসেস গুলি সম্পূর্ণ করে নিন। এবং যাবতীয় তথ্যগুলো সঠিকভাবে দিন। সাথে আপনি যে বিষয়ে ফ্রিল্যান্সিং কাজ শুরু করছেন সেই বিষয়ের উপরে আপনার প্রোফাইলে সমস্ত বিবরণ দিন। এবং আপনি যে বিষয়ে উপরে কাজ করবেন সেই বিষয়ের উপরে বিশেষভাবে অভিজ্ঞতা বা এক্সপেরিয়েন্স অর্জন করেনি।

এছাড়া আপনি আপনার কম্পিটিটার বা আপনার মত যে ফ্রিল্যান্সার গুলো কাজ করছে। তাদের প্রোফাইলটিকে ভালোভাবে চেক করে ঠিক তাদের মত করে আপনার প্রোফাইলটিকে সাজান এবং নিয়মিত ফাইবার ও আপওয়ার্ক প্ল্যাটফর্মটিতে একটিভ থাকুন। এবং আপনি যে বিষয়ে কাজ করছেন তার উপরে একটি ওয়েবসাইট বানিয়ে বা আপনার প্রোফাইলের মধ্যে সেই বিষয়ে আপনার কাজের কিছু নমুনা বা ডেমো আপলোড করে রাখতে পারেন। সাথে নতুন নতুন ফ্রিল্যান্সার প্ল্যাটফর্ম গুলিতে যোগদান করুন।

জানুন : ফ্রিল্যান্সিং করে সর্বোচ্চ মাসে কত টাকা ইনকাম করা যায়?

এরপর আপনার বিশেষ কাজের অভিজ্ঞতা থাকলে আপনি সরাসরি ফ্রিল্যান্সিং এর ক্লায়েন্ট বা কাজ পেতে গুগল ম্যাপ ব্যবহার করতে পারেন।

এর জন্য আপনি সবার প্রথমে গুগল ম্যাপ টি ওপেন করে। আপনার যে ধরনের ক্লাইন্ট বা কাজের প্রয়োজন সেই ধরনের ব্যবসা গুলিকে অনুসন্ধান করতে পারেন।

যেমন; আমি ওয়েবসাইট ডিজাইনের কাজ করে থাকি। সুতরাং আমি গুগল ম্যাপে গিয়ে সবার প্রথমে সার্চ করব আমার কাছাকাছি অবস্থিত হোটেল। রেস্টুরেন্ট, পার্ক কিংবা অন্যান্য কোনো ব্যবসা।

hotel list in map

তাহলে আপনি সেখানে দেখতে পাবেন আপনার পার্শ্ববর্তী অবস্থিত যতগুলি হোটেল, রেস্টুরেন্ট, কিংবা পার্ক আছে সেগুলোর তালিকা চলে আসবে। আপনি প্রতিটি প্রোফাইল খুললে দেখতে পাবেন। তাদের সাথে যোগাযোগ নম্বর উপলব্ধ আছে আপনি সেখান থেকে সেই হোটেল বা রেস্টুরেন্ট এর নাম বা কন্টাক্ট নাম্বার সংগ্রহ করে একটি লিস্ট তৈরি করবেন।

hotel ac opened

এরপর সেই লিস্ট ধরে আপনি তাদের দেওয়া কন্টাক্ট নম্বরে সরাসরি ফোন কল করে বা Whatsapp এসএমএস এর মাধ্যমে আপনার সার্ভিস গুলো তাদের অফার করতে পারেন।

যেমন ধরুন; আমি ওয়েবসাইট ডিজাইনের কাজ করি। সুতরাং আমি যখন কোনো হোটেল বা রেস্টুরেন্টের Google মাই বিজনেস এর প্রোফাইল খুলবো। তখন সেখানে তাদের ওয়েবসাইট এর লিংক দেখতে পাবো। আর যদি কোন ওয়েবসাইট না থাকে। তাহলে সেটা আমার জন্য একটা পোটেনশিয়াল কাস্টমার ক্লায়েন্ট হয়ে যাবে।

তখন আমি সেই হোটেল বা রেস্টুরেন্টের যে ফোন নম্বরটি দেওয়া আছে। সেই ফোন নম্বরে সরাসরি কল করে বা Whatsapp এর মাধ্যমে আমার ওয়েবসাইট ডিজাইনের সার্ভিসটি তাদের অফার করব। এবং সেই সময় আমাকে সেই ওয়েবসাইটের বিষয়ে সম্পূর্ণ বিবরণ সেই ক্লাইন্টকে দেব, এবং সে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কিভাবে তার ব্যবসাকে আরও বৃদ্ধি করতে পারবে? ওয়েবসাইটের বেনিফিট কি তার কিছু টিপস দেব। যার ফলে সে যেন আমার কাছ থেকে ওয়েবসাইটটি বানাতে চাই।

অন্যথায় আপনি যদি আমার মত একটু অভিজ্ঞ ওয়েবসাইট ডিজাইনার হয়ে থাকেন। তাহলে আপনি যাদের ওয়েবসাইট ডিজাইন হয়ে আছে তাদের ওয়েবসাইটগুলোকে খুলে চেক করে দেখতে পারেন। দেখবেন তার মধ্যে এমনও অনেক ওয়েবসাইট আছে যেগুলোর ডোমিন হোস্টিং এর মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে, এবং তাদের ওয়েবসাইটটি খুলছে না। এবং এমনও অনেক ওয়েবসাইট দেখতে পাবেন যেগুলো ডিজাইন একদম বেকার বা সাধারণ। সেই ধরনের ক্লায়েন্টগুলোকে আপনি কন্টাক করে বলতে পারেন যে আমি আপনার ওয়েবসাইটটি পুনরায় চালু করে দেব, বা ভালো মানের ডিজাইন সহ ওয়েবসাইট তৈরি করে দেব। তাহলে দেখবেন অনেকেই আপনার কাছ থেকে ওয়েবসাইট বানাতে রাজি হয়ে যাবে।

এরকমভাবে আমি যদি প্রতিদিন টার্গেট করে ৩০ থেকে ৪০ টি কল বা এসএমএস পাঠিয়ে থাকি। তাহলে আশা করছি দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে একটি থেকে দুটো কাজ পেয়ে যাবেন। এছাড়া যদি কোন হোটেল, রেস্টুরেন্ট বা পার্ক আপনার খুবই নিকটবর্তী হয়ে থাকে। তাহলে আপনি সরাসরি তাদের অফিসে গিয়ে ম্যানেজারের সাথে বা মালিকের সাথে কথা বলে তাদের ওয়েবসাইট বানানো বা আপনার সার্ভিস সম্পর্কে কথা বলে কাজটি নিতে পারেন। তবে এর জন্য আপনাকে অন্যদের তুলনায় একটু কম পয়সায় কাজ করতে হবে।

এছাড়া আপনি একটি ইউটিউব চ্যানেল, ফেসবুক পেজ, টুইটার একাউন্ট বা লিঙ্কডইন অ্যাকাউন্ট খুলে। সেখানে আপনি যে সার্ভিস গুলো ক্লায়েন্টের কাছে বিক্রয় করতে চান সেই বিষয়ে ভিডিও তৈরি করে পাবলিশ করতে পারেন, এবং প্রতিটি ভিডিওতে আপনার ফোন নম্বর বা Whatsapp নাম্বার দিয়ে কাজ করানোর জন্য যোগাযোগ করতে বলতে পারেন। ফলে সেখান থেকেও আপনি ভালো মানের ক্লাইন্ট পেতে পারেন। এই পদ্ধতি অবলম্বন করে আমি প্রায় ৩০টির বেশি ওয়েবসাইট ডিজাইন এর ক্লায়েন্ট পেয়েছি।

এরপর আপনি যে কাজটি করতে পারেন, সেটি হলো আপনার পরিচিত যত বন্ধু-বান্ধব বা আত্মীয়-স্বজন আছে তাদের সাথে আপনার কাজের বিষয়ে আলোচনা করে বলতে পারেন, আমি ওয়েবসাইট ডিজাইন গ্রাফিক্স ডিজাইন বা যেই ধরনের কাজ করেন। এই ধরনের কাজ করে থাকি, সুতরাং আপনাদের যদি কখনো কাজের প্রয়োজন হয়ে থাকে বা আপনার পার্শ্ববর্তীতে চেনা পরিচিত কারো এই কাজের প্রয়োজন হয়ে থাকে। তাহলে আমাকে জানাবেন এবং সেই কাজটা হলে আমি আপনাকে দুই থেকে তিন শতাংশ কমিশন দেব। তাহলে দেখবেন তাদের রেফারেন্সে আপনি অনেক লোকাল ক্লায়েন্ট এর কাজ পেতে পারেন।


একদম শেষের এইযে ধাপটি আপনার সাথে শেয়ার করছি। এটিতে আপনাকে একটু টাকা খরচা করতে হবে, কিন্তু আপনি তাৎক্ষণিক রেজাল্ট পাবেন। এর জন্য আপনাকে সবার প্রথমে একটি ওয়েবসাইট ডিজাইন করাতে হবে, আপনি যে বিষয়ে সার্ভিস বা পরিষেবা প্রদান করেন তার উপরে।

তারপর সেই ওয়েবসাইটটিকে গুগল বিজ্ঞাপন বা ফেসবুক বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রচার শুরু করতে পারেন। এর জন্য আপনাকে কিছু টাকা ব্যয় করতে হবে। তাহলে আপনি তৎক্ষণিক রেজাল্ট পাবেন। সুতরাং আপনি যদি ওয়েবসাইট তৈরি না করতে পারেন তাহলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আমরা আপনার ওয়েবসাইটটি খুব অল্প খরচেই বানিয়ে দেব, এবং যেটা দেখে প্রত্যেক দর্শক আপনার কাজের প্রতি আকর্ষিত হবে।


আশা করি আপনি আপনার ফ্রিল্যান্সিং কাজের ক্লায়েন্ট পাওয়ার পদ্ধতিগুলি জানতে পেরে খুশি হয়েছেন। যদি হয়ে থাকেন তাহলে এই নিবন্ধনটি বেশি বেশি করে শেয়ার করে দিন। আর আপনার যদি আরো কোন পদ্ধতি জানা থাকে তাহলে সেটি কমেন্ট বক্সে জানান।

শেষ কথা:

সমস্ত নতুন ও অভিজ্ঞ ফ্রিল্যান্সাররা এই সমস্ত পদ্ধতি গুলো অবলম্বন করে, তারা প্রচুর পরিমাণ ফ্রিল্যান্সিং কাজের ক্লায়েন্ট উঠিয়ে থাকে। সুতরাং আপনিও এই পদ্ধতি গুলো অবলম্বন করতে পারেন এবং আপনার ফ্রিল্যান্সিং জার্নি টাকে আগিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। তবে একটা কথা মনে রাখবেন আপনার দক্ষতা এবং ক্লায়েন্টের সাথে কথা বলার অভিজ্ঞতার উপরে আপনার কাজ পাওয়ার পার্সেন্টেজ নির্ভর করে। সুতরাং যত ভালোভাবে ক্লাইন্টকে হ্যান্ডেল করতে পারবেন তত বেশি কাজ পাবেন।

আরো পোস্ট পড়ুন :-

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।