নতুন পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে এবং কত টাকা লাগে ?
পাসপোর্ট একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট হিসেবে নাগরিক পরিচিত প্রমাণ পত্র। সুতারং আপনি যদি একটি নতুন পাসপোর্ট তৈরী করতে চান তাহলে এই আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়ুন। আর জেনে নিন একটি নতুন পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে এবং কত টাকা লাগে।
পাসপোর্ট তৈরী করার জন্য ভারতবর্ষের, পশ্চিমবাংলা রুবি হোস্টপিটালের সামনে পাসপোর্ট অফিস, সেখানে গিয়ে তাদের সাথে পাসপোর্ট সম্পর্কিত সকল তথ্য, যেমনঃ আবেদনের ধরন, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, প্রয়োজনীয় ফি, সময়সীমা, এবং তৈরির পদ্ধতি সহ আলোচনা করে নিতে পারেন।
তবে আপনি যদি পাসপোর্ট অফিসে না যেতে চান তাহলে আপনি নিচে দেওয়া পদ্ধক্ষেপ গুলি জেনে নিন।
পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে
১. পাসপোর্টের আবেদন ফরম পূরণ করা
পাসপোর্ট তৈরির প্রথম ধাপ হচ্ছে আবেদন ফরম পূরণ করা।
আবেদন ফরম পাওয়ার জন্য আপনি এখানে ক্লিক করে পাসপোর্ট অফিসের ওয়েবসাইট থেকে আবেদন ফর্মটি ডাউনলোড করতে পারবে অথবা পাসপোর্ট অফিসে থেকে যেটা পাওয়া যায় সেটি সংগ্র করুন।
তারপর ফরমটি পূরণ করার সময়, আবেদনকারীর ব্যক্তিগত ও পারিবারিক পরিচয় বা তথ্য দিন, যেমনঃ নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, জন্ম তারিখ, ঠিকানা, ন্যাশনাল আইডি নম্বর, আপনার ছবি সহ উল্লেখ করতে হবে। এছাড়াও, আপনি যদি ব্যাংকের মারফত ভিসা পেতে চান, তবে আপনার ব্যাংকের তথ্য ও লেনদেন বিবরণ নথিভুক্ত করতে হবে।
২. পাসপোর্ট তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র
পাসপোর্ট তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্রগুলো তুলনামূলকভাবে সংগৃহ করে রাখতে হবে।
প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুলো হলঃ জন্মনিবন্ধন সার্টিফিকেট, জাতীয় পরিচয়পত্র, অভিভাবকের বাবা ও মায়ের সার্টিফিকেট (যদি আবেদনকারী বিবাহিত না হয়), নিকটস্থ থানার নাগরিকত্ব সার্টিফিকেট, এবং সত্যায়িত করণীয় অভিযানের জন্য যে কোনও একটা কাগজপত্র।
এছাড়াও, ৪ কপি ছবি প্রয়োজন হবে যা নিয়মিত পাসপোর্ট সাইজের হতে হবে এবং সেটি উজ্জ্বলতা ও পরিষ্কার হতে হবে।
৩. পাসপোর্ট ফি বা টাকা
পাসপোর্ট করতে আপনাকে কিছু টাকা ব্যয় করতে হবে যেমন “Fresh or Re-issue” পাসপোর্ট করতে করতে আপনাকে ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা আর পুলিশ ভেরিফেকেশনের জন্য ৫০০০ টাকা খরচ হতে পারে। এছাড়া আপনি যদি তৎক্ষণিক, বা আরো অন্য অন্য যে পাসপোর্ট গুলি আছে সেগুলি করতে আপনার আরো বেশি টাকা খরচ হতে পারে। বর্তমান পাসপোর্ট করার ফি দেখতে আর্টিকেলের নিচে দেওয়া ছবিটি দেখে নিন।
ই-পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে
ই-পাসপোর্ট করার জন্য নিম্নলিখিত কাগজপত্র এবং পদক্ষেপগুলি প্রয়োজন, যেমন :
আবেদন ফরম: প্রথমেই, আপনাকে পাসপোর্ট আবেদন ফরম পূরণ করতে হবে। ফরমটি সাধারণত পাসপোর্ট অফিসে সহজেই পাওয়া যায় এবং অনলাইনেও ডাউনলোড করা যায়। ফরমটি সংগ্রহ করে ফরমটিতে ব্যক্তিগত তথ্য, ঠিকানা, জন্মতারিখ, পেশা ইত্যাদি। যেসব তথ্য প্রয়জন তা ভালভাবে পূরণ করতে হবে।
আইডেন্টিটি প্রুফ: আপনাকে একটি আইডেন্টিটি প্রুফ দিতে হবে, যেমন : জন্ম সার্টিফিকেট, জাতীয় পরিচয়পত্র (নতুন), ভোটার আইডি কার্ড, আধার কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স ইত্যাদি। আইডেন্টিটি প্রুফটির একটি কপি এবং অরিজিনাল নথিপত্র প্রদান করতে হবে।
ঠিকানার প্রমাণপত্র: আপনাকে আপনার বর্তমান ঠিকানার প্রমাণপত্র দিতে হবে। এটিতে সাধারণত আপনার জাতীয় পরিচয়পত্রের একটি অবশিষ্ট অংশ বা স্থায়ীভাবে অবস্থিত ঠিকানার প্রমাণ হিসাবে ব্যবহার করতে হবে।
ছবি: আপনাকে একটি স্বচ্ছ ছবি দিতে হবে যেটি আপনার মুখের ছবি হবে। সাধারণত ছবিটি রঙিন ব্যাকগ্রাউন্ডে থাকা এবং আপনার চেহারাটি পরিষ্কারভাবে দেখতে পাওয়া যায় এরকম হতে হবে।
পাসপোর্ট ফি: পাসপোর্ট আবেদনের জন্য নির্ধারিত ফি প্রদান করতে হবে। ফির পরিমাণটি সরকারের নির্ধারিত নীতিমালা অনুসারে পরিবর্তিত হতে পারে। ফির পরিমাণ জানতে আপনার নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিসের সাহায্য নিতে পারেন বা তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে জানতে পারেন।
এই পদক্ষেপগুলি অনুসরন করার পর, আপনি আপনার পাসপোর্ট আবেদন জমা দিতে পারেন এবং আপনার পাসপোর্ট ইস্যু করার জন্য অপেক্ষা করতে হবেন। এই প্রক্রিয়া সাধারণত ৪-৬ সপ্তাহের মধ্যে সম্পন্ন হয়ে যাই। তাই আপনার পাসপোর্ট তৈরী করা হয়ে গেলে, আপনি সেটি নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিস বা পোস্ট অফিসে থেকে পেয়ে যাবেন।
স্টুডেন্ট পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে
আপনি যদি একজন ছাত্র হন এবং আপনি স্টুডেন্ট পাসপোর্ট করতে ইচ্ছুক হন, তবে আপনাকে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করতে হবে :
প্রমাণপত্র সমূহ: স্টুডেন্ট পাসপোর্ট জন্য আপনার একটি ভ্যালিড স্টুডেন্ট আইডেন্টিফিকেশন প্রুফ প্রদান করতে হবে। এটি আপনার স্কুল বা প্রতিষ্ঠানের ডকুমেন্ট দরকার হতে পারে, যেমন প্রতিষ্ঠানের প্রমাণপত্র, ভর্তি পরীক্ষার কার্ড, অথবা অন্যান্য প্রমাণপত্র যা আপনার ছাত্র পরিচিতি সঠিক ভাবে করতে পারে। এছাড়া আপনার প্রতিষ্ঠানের প্রমাণপত্রটির উপর প্রতিষ্ঠানের সাক্ষর এবং অফিসিয়াল স্ট্যাম্প থাকতে হবে।
আবেদন ফরম: স্টুডেন্ট পাসপোর্ট আবেদন ফর্মটি ডাউনলোড বা সংগ্রহ করে ফিলাপ করতে হবে। ফরমে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, শিক্ষাগত তথ্য, পাসপোর্ট তৈরির কারণ ইত্যাদি প্রদান করতে হবে। ফরমটিতে সঠিকভাবে তথ্য দিয়ে পূরণ করতে হবে এবং সবগুলি প্রমাণপত্রের কপির তার সঙ্গে সংযুক্ত করতে হবে।
পাসপোর্ট ফি: স্টুডেন্ট পাসপোর্টের জন্য নির্ধারিত ফি প্রদান করতে হবে। এই পদক্ষেপগুলি সম্পূর্ণ করে আপনি স্টুডেন্ট পাসপোর্ট এর আবেদন জমা দিতে পারেন। তারপর ৪-৬ সপ্তাহের মধ্যে আপনার পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়।
জানুন : ঘরে বসে আয় করার উপায় সকলের জন্য।
শিশুদের ই পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে
আপনি যদি আপনার শিশুর জন্য ই পাসপোর্ট করতে ইচ্ছুক হন, তবে আপনাকে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি অনুসরণ করতে হবে:
১. শিশুর জন্ম সার্টিফিকেট : শিশুর জন্ম নিবন্ধন সার্টিফিকেট প্রদান করতে হবে। এটি প্রমাণ করবে আপনার শিশুর জন্ম তারিখ এবং পিতা মাতার নাম।
২. অভিভাবকের পাসপোর্ট: শিশুর পাসপোর্ট তৈরির জন্য তার পিত মাতার পাসপোর্ট অবশ্যই প্রয়োজন। পিত মাতা বা অভিভাবকের পাসপোর্ট থাকলেও পাসপোর্ট অফিস কর্তৃপক্ষ যদি অভিভাবকের কতৃত্ব নিশ্চিত না করে, তবে অভিভাবকের সাক্ষরকৃত সম্পর্কিত নিয়মিত পরিষ্কারভাবে আবেদন করতে হবে।
৩. আবেদন ফরম: শিশু পাসপোর্ট আবেদন ফর্মটি সংগ্রহ করে সেটি পূরণ করতে হবে। ফর্মে আপনার শিশুর ব্যক্তিগত তথ্য, অভিভাবকের তথ্য, শিশুর জন্ম তারিখ ইত্যাদি প্রদান করতে হবে। সঠিকভাবে ফর্মটি পূরণ করার পর প্রয়োজনীয় প্রমাণপত্র জেরক্স কপি তার সঙ্গে দিতে হবে।
৪. পাসপোর্ট ফি: ই পাসপোর্টের জন্য নির্ধারিত ফি প্রদান করতে হবে। তারপর ৪-৬ সপ্তাহের মধ্যে আপনার শিশুর পাসপোর্ট ইস্যু করা হয়ে যাবে এবং আপনি সেটা আপনার হাতে পেয়ে যাবেন।
পাসপোর্ট করতে কত টাকা লাগে
পাসপোর্ট করার জন্য নির্ধারিত ফি মানেই আপনাকে কিছু টাকা প্রদান করতে হবে। পাসপোর্ট ফির পরিমাণ প্রতিবছরে সরকারের নির্ধারিত নীতিমালা অনুসারে পরিবর্তিত হয়। ফির পরিমাণটি একটি সময়সীমার মধ্যে পর্যালোচনা করে নির্ধারিত হয়।
তাই বর্তমানে পাসপোর্ট করার জন্য আপনার ১৫০০ টাকা প্রদান করতে হবে। সঠিকভাবে জানতে আপনার নিকটস্থ পাসপোর্ট অফিসের বা তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এ দেখতে পারো।
সাধারণত পাসপোর্ট ফির পরিমান শুরু হতে পারে কয়েক হাজার টাকা থেকে। এছাড়াও, কয়েকটি অতিরিক্ত সেবা যেমন তাত্ক্ষণিক সেবা বা ইমারজেন্সি পাসপোর্ট মানে আপনার দ্রুত প্রয়োজন হলে অতিরিক্ত ফি প্রদান করতে হতে পারে।
এখনকার বর্তমান পাসপোর্ট তৈরির ফি ছবি আমি নিচে দিয়েছে এটা দেখে আপনি বুজতে পারেবগ যে কোন ধরণের পাসপোর্ট করতে কত লাগে এবং আপনার জন্য সঠিক কোনটি।
পাসপোর্ট এর জন্য পুলিশ ভেরিফিকেশন কি
পাসপোর্ট ইস্যুর প্রক্রিয়ায় পুলিশ ভেরিফিকেশন একটি মৌলিক ধাপ। এটি পাসপোর্ট অফিস দ্বারা প্রযোজ্য হয়, যাতে আপনার পাসপোর্ট আবেদনে পত্রের তথ্য ও প্রমাণপত্র সঠিক ভাবে ভেরিফাই করা যায় সেই জন্য।
পুলিশ ভেরিফিকেশনের সময়, আপনার নিকটবর্তী পুলিশ স্টেশনে গিয়ে আপনার জমা দেওয়া তথ্য বা ডকুমেন্ট গুলি প্রমাণপত্র হিসাবে যাচাই করা হয়।
পুলিশ অফিসার সমস্ত তথ্য সম্পর্কে পরিচিত হয়ে আপনার প্রমাণপত্রের তথ্যের মাধ্যমে সত্যতা পরীক্ষা করবেন।
পুলিশ ভেরিফিকেশনের সময় আপনার ছবি তুলে নেওয়া হতে পারে এবং পুলিশ অফিসার এর সাক্ষরতা নেওয়ার প্রয়োজন হতেও পারে।
পুলিশ ভেরিফিকেশন সাধারণত আপনার পাসপোর্ট টি আবেদন করার পর হয়। তবে আপনার যদি সমস্ত ডকুমেন্ট গুলো সঠিক থাকে তাহলে কোনো চিন্তা করার দরকার নেয়।
পাসপোর্ট সম্পর্কে কিছু প্রশ্নাবলী?
পাসপোর্ট করতে কত দিন লাগে?
পাসপোর্ট ইস্যুর জন্য কত দিন সময় লাগে সেটি পাসপোর্ট প্রতিষ্ঠানের পলিসি এবং সরকারি প্রক্রিয়াসমূহের উপর নির্ভর করে। সাধারণত, পাসপোর্ট প্রায় ৩০-৪৫ দিনে সময় লাগে পাসপোর্ট করতে। তবে, কিছু অতিদ্রুত সেবা প্রদানকারী অপশন আছে যেগুলি আপনাকে ৭-১০ দিনের মধ্যে পাসপোর্ট তৈরী করে দেয় তবে এক্ষেত্তে আপনকে অতিরিক্ত টাকা প্রদান করতে হতে পারে।
পাসপোর্ট করতে কত বছর বয়স লাগে?
পাসপোর্ট করতে কত বছর বয়স লাগে সেটি প্রতিষ্ঠানের নীতিমালা এবং সরকারি নির্দেশিকা অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে। সাধারণত, আমাদের ভারতবর্ষে পাসপোর্ট করতে আপনার বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর হতে হবে বা তার উদ্ধে হলেও হবে। কিন্তু কিছু দেশে এই বয়স সীমা বেশি হতে পারে।
পাসপোর্ট করতে কি মা বাবার আইডি কার্ড লাগে?
অবশ্যই পাসপোর্ট করতে আপনার মাতার ও পিতার আইডি কার্ড প্রয়োজন। প্রায় সমস্ত দেশে এই পাসপোর্ট আবেদনে ক্ষেত্রে মাতার ও পিতার আইডি কার্ড প্রয়োজন হয়।
ভোটার আইডি কার্ড ছাড়া কি পাসপোর্ট করা যাবে?
ভোটার আইডি কার্ড ছাড়াও পাসপোর্ট করা যায়। পাসপোর্টের জন্য ভোটার আইডি কার্ড একটি “অপশনাল” মানে না দিলেও চলবে, কিন্তু আপনি এই ভোটার কার্ডটি ইস্যুর অতিরিক্ত পরিচয়পত্র হিসাবে ব্যবহার করতে পারেন।
শেষ কথা :
আশাকরি আপনি এই আর্টিকেলটি পড়ে বুজতে পেরেছেন? একটি নতুন পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে এবং কত টাকা লাগে। যদি আপনার বুজতে কোথাও অসুবিধা হয় বা কোনো প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্ট বক্সে জানান। এরকম ধরণের নতুন টিপস পেতে আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলে যুক্ত হন এবং এই ব্লগটি সাবস্ক্রিব করে রাখুন সাথে তোমার বন্ধু বা পরিবারের সাথে শেয়ার করুন। ধন্যবাদ সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ার জন্য।