কম্পিউটারের কার্যপ্রণালী বা সিস্টেম বিভিন্ন অংশ ও কাজ (Function)
কম্পিউটার শেখার আগে আপনাকে অবশ্যই কম্পিউটারের কার্যপ্রণালী বা সিস্টেম সম্পর্কে জানা দরকার। কারণ অনেকে আছে কম্পিউটার শেখার আগে সেটির সম্পর্কে জানতে আগ্রহী থাকে। এই আর্টিকেলটি তাদের জন্য।
সুতারং আপনি যদি কম্পিউটারের কার্যপ্রণালী সম্পর্কে জানতে চান তাহলে সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন। কারণ এটি আপনাকে Function of a Computer জানতে সাহায্য করবে। তাই চলুন দেরি না করে জেনে নিই কম্পিউটার কার্যপ্রণালী গুলি :
কম্পিউটারের কার্যপ্রণালী
একটি কম্পিউটার সিস্টেমের কার্যপ্রণালীকে প্রধানত পাঁচটি ভাগে ভাগ করা যায়।
(a) অনুপ্রবেশ অংশ বা ইনপুট পার্ট যার মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য বা ডেটা বাইরে থেকে CPU তে পাঠানো যায়।
(b) কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য স্মৃতিতে ধরে রাখা বা জমা রাখা।
(c) অনুপ্রবেশ অংশ হতে যে তথ্য CPU তে যায়, তা প্রসেসিং হয় অর্থাৎ বিভিন্ন ধরনের পাটিগাণিতিক ও যুক্তি সংক্রান্ত কাজ সম্পন্ন হয়।
(d) প্রসেসিং হবার পর ফলাফল আউটপুট অংশ বা নির্গম এককে পাওয়া যায়।
(e) সমস্ত কার্য সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করাও কম্পিউটারের কার্যপ্রণালীর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
কম্পিউটারের গঠন (Organization of Computer) :
বিভিন্ন প্রকারের কার্যগত একক (func tional unit) নিয়ে হার্ডওয়ার এবং বিভিন্ন হার্ডওয়ারগুলিকে একত্রিত করে গঠিত হয় কম্পিউটার। মূলত একটি কম্পিউটারের তিনটি অংশ। যথা – ইনপুট ডিভাইস ইউনিট, সি.পি.ইড (CPU) এবং আউটপুট ডিভাইস ইউনিট। যেটা আগের আর্টিকেলে ২ নং চিত্রে দেখানো হয়েছে।
CPU (সি পি ইউ):
CPU এর পুরো নাম সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট (Central Processing Unit) CPU হল কম্পিউটারের মস্তিষ্ক। এর প্রধান অংশগুলি হল কন্ট্রোল ইউনিট (Control Unit) বা নিয়ন্ত্রণ শাখা এবং অ্যারিথমেটিক অ্যান্ড লজিক ইউনিট (Arithmetic And Logic Unit) বা পাটিগণিত ও যুক্তিসংক্রান্ত শাখা।
ROM শুধুমাত্র পড়া যায় ও ব্যবহার করা যায়, পরিবর্তন করা যায় না। বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলেও ROM-এ সজ্জিত বিষয়বস্তু অক্ষত থাকে। RAM পড়াও যায় আবার এতে ইচ্ছামত লেখাও যায় অর্থাৎ পরিবর্তন করা যায়। বৈদ্যুতিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে RAM-এর সজ্জিত বিষয়বস্তু মুছে যায়।
স্মৃতি (Memory) :
কম্পিউটারের সমস্ত তথ্য জমা হয়, কম্পিউটারের স্মৃতি বা মেমরিতে। কম্পিউটারের স্মৃতিকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন –
- (a) মূল স্মৃতি বা মেইন মেমরি অথবা প্রাইমারি মেমরি।
- (b) অনুবর্তী স্মৃতি বা সেকেন্ডারি মেমরি অথবা অক্সলারি মেমরি।
প্রাইমারি মেমরির উদাহরণ হল- র্যাম (RAM – Random Access Memory) ও রম (ROM – Read Only Memory) এবং সেকেন্ডারি মেমরির উদাহরণ হল কমপ্যাক্ট ডিস্ক বা সি. ডি. ম্যাগনেটিক টেপ, ফ্লপি ডিস্ক ইত্যাদি।
ইনপুট ডিভাইস (Input devices) :
ইনপুট ডিভাইস হল এক ধরনের বৈদ্যুতিক যান্ত্রিক (Electromechanical) যন্ত্রাংশ যার মাধ্যমে বহারকারী বাইরে থেকে প্রয়োজনীয় তথ্য (Data) কম্পিউটারে প্রদান করতে পারেন। উদাহরণ; কি-বোড, মাউস প্রভৃতি।
আউটপুট ডিভাইস (Output Device) :
আউটপুট ডিভাইসগুলি হল এক ধরনের বৈদ্যুতিক যান্ত্রিক যন্ত্রাংশ যাদের মাধ্যমে ব্যবহারকারী কম্পিউটারের কাছ থেকে প্রদত্ত তথ্যের (Data) ফলাফল (Information) জানতে পারে। যেমন – মনিটর, প্রিন্টার।
কী-বোর্ডের মধ্যে আছে কতকগুলি ম্যাটিক্স বা সুইচ (প্রতি কী-এর জন্য একটি স্যুইচ) প্রতিটি কী-এ চাপ দেওয়ার ফলে তা কম্পিউটারে একটি ডিজিট্যাল কোড পাঠায় যেটা নির্ধারণ করে কোন কী-টিতে চাপ দেওয়া হয়েছে।
মাউস হল পরেন্টিং ডিভাইস যা তার তল বরাবর গড়িয়ে চলে এবং স্ক্রিন-এ পয়েন্টার নাড়াচাড়া করে।
কম্পিউটারের স্ক্রিনকে মনিটর বলে। মনিটারে ফুটে ওঠা চিত্র অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রঙিন ডট-এর সমন্বয়ে গঠিত হয়। এগুলিকে বলা হয় পিক্সেল।
বিভিন্ন ইমপ্যাক্ট প্রিন্টারগুলি হল- লাইন প্রিন্টার, ড্রাম প্রিন্টার, ডেইসি হুইল প্রিন্টার এবং ডট ম্যাট্রিক্স প্রিস্টার। বিভিন্ন নন ইমপ্যাক্ট প্রিন্টারগুলি হল ইমপ্যাক্ট প্রিন্টার, লেজার প্রিন্টার।
বাস স্ট্রাকচার (Bus structure) :
কম্পিউটারের অভ্যন্তরে একটি যন্ত্রাংশ হতে অন্য যন্ত্রাংশের সাথে সঠিকভাবে যোগাযোগ করতে অথবা স্মৃতিতে সঠিক স্থান খুঁজে পেতে এবং তথ্য আদান প্রদানের জন্য বাস স্ট্রাকচারের প্রয়োজন।
সাধারণত তিন ধরনের বাস স্ট্রাকচার রয়েছে। যথা- (a) অ্যাড্রেস বাস (b) ডেটা বাস (c) কন্ট্রোল বাস।
অপারেটিং সিস্টেম (Operating System) :
অপারেটিং সিস্টেম হল একধরনের সিস্টেম সফটওয়্যার যা কতকগুলি সফ্টওয়্যার যা কতগুলি সফটওয়্যার দ্বারা সংঘটিত এবং কম্পিউটারের বিভিন্ন অংশকে সুসংবদ্ধভাবে পরিচালিত করে। যথা – স্মৃতি বা মেমরি, প্রসেসর, ফাইল এবং ইনপুট-আউটপুট ডিভাইস।
ডস্ (DOS) :
DOS বা ডিস্ক অপারেটিং সিস্টেমের সাহায্যে নির্দিষ্ট সময়ে মাত্র একজন ব্যবহারকারী কোনো কমান্ডের সাহায্যে একটি নির্দিষ্ট কাজই সম্পাদন করতে পারেন। এই DOS সিস্টেমে একটি অংশে কিছু কমান্ড আছে। যেগুলি আবাসিক বা Residual ধরনের কমান্ড এবং অন্য অংশটি হল উপযোগিতা বা ইউটিলিটি প্রোগ্রাম, যেগুলি পেলে তবেই ব্যবহার করা যায়।
DOS এর সিস্টেম ফাইলগুলি হল– IO.SYS, MS-DOS, SYS এবং COMMAND.COM.
DOS হার্ডওয়্যার ও সফট মধ্যে সংযোগ সাধনের কাজ করে। 10 Sys MS DOS Syx Command.com
- জানুন : অনলাইনে অর্থ উপার্জনের 10 টি উপায়।
উইন্ডোজ (Windows) :
উইন্ডোজ হচ্ছে একটি চিত্রভিত্তিক অপারেটিং সিস্টেম। উইন্ডোজের পরিবেশে কমান্ড না লিখে মাউসকে প্রয়োজনমাফিক চালনা করে পর্দায় অবস্থিত পয়েন্টারকে অভীষ্ট আইকনে ক্লিক করে কমান্ড দেওয়া হয়। উইন্ডোজ হল বহু-জন ব্যবহারযোগ্য, বহু কাজ সম্পাদন যোগ্য অপারেটিং সিস্টেম।
উইন্ডোজের বিভিন্ন ভার্সন হল- Windows 10, Windows 8, Windows , Windows XP ইত্যাদি।
এছাড়া অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারকারী ও কম্পিউটারের মধ্যে সংযোগসূত্ররূপে কাজ করে। উদাহরণ – DOS (ডস্), Windows (উইন্ডোজ), Linux (লিন্যাক্স) ইত্যাদি।
উইন্ডোজ চালু হওয়ার পর স্ক্রিনে বিভিন্ন ধরনের ছোটো ছোটো চিত্র প্রদর্শিত হয় এই চিত্র বা প্রতীকগুলিকে বলা হয় আইকন। প্রতিটি আইকনের জন্য অ্যাপ্লিকেশনের শর্টকার্ট তৈরী করা থাকে। কোনো আই ডাবল ক্লিক করলেই সংশ্লিষ্ট অ্যাপ্লিকেশন চালু হয়।
লিনাক্স (LINUX) :
লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম উইন্ডোস অপারেটিং সিস্টেমের অনুরূপ হলেও এতে কিছু উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য বর্তমান যা লিনাক্সকে একটি উপকারী এবং নমনীয় অপারেটিং সিস্টেমের মর্যাদা দিয়েছে।
এর মুখ্য বৈশিষ্ট্যাবলী হল : (i) এটি হল মুক্ত উৎস অর্থাৎ সফটওয়্যাররূপে এটিকে পাওয়া যায়। যা থেকেও এটিকে ব্যবহার করতে পারে এবং তাঁর ব্যবহারের উপযোগী করতে কোনো অতিরিক্ত বৈশিষ্ট্যাবলী সংযোজন করে এর কার্যকারী বৃদ্ধি করতে পারে। (ii) লিনাক্স-এ ভাইরাস নেই বললেই চলে। (iii) স্থিতিশীল (stable) দীর্ঘকাল ব্যবহারযোগ্য (iv) অনেকগুলি ওয়ার্কস্পেস (বা ডেক্সটপ স্ক্রিন)।
উইন্ডোজ-এ একটিমাত্র ডেক্সটপ প্রিন আছে কিন্তু লিনাক্সে চারটি ডেক্সটপ ছিল বা থাকে। লিনাক্সের ক্ষেত্রে এক একটি ডেক্সটপ স্ক্রিনকে ওয়ার্কস্পেশ বলা হয়। অর্থাৎ লিনাক্সে চারটি ওয়ার্কে থাকে।
কার্য ও গঠন অনুযায়ী একটি কম্পিউটারের গঠন নীচে ছবিতে ছকের আকারে দেখানো হল।
কম্পিউটারের কার্যপ্রণালী সম্বন্ধে প্রশ্ন উত্তর
১. পৃথিবীতে তে বিভিন্ন ধরনের সংখ্যাপদ্ধতি চালু আছে সেগুলি হল : (i) দশমিক সংখ্যা পদ্ধতি (ii) বাইনারি সংখ্যা পদ্ধতি (iii) অক্টেল সংখ্যা পদ্ধতি এবং (iv) হেক্সাডেসিমেল সংখ্যাপদ্ধতি।
২. কম্পিউটার নামক বৈদ্যুতিন যন্ত্রটি আমাদের ভাষাকে বাইনারি সংখ্যাপদ্ধতিতে (অর্থাৎ 0 এবং 1-এ) পরিবর্তন করে এবং তাকে (কম্পিউটারকে) দেওয়া নির্দেশগুলি পালন করে।
৩. কম্পিউটার হল একটি বৈদ্যুতিন যন্ত্র যা একগুচ্ছ নির্দেশাবলী তথা প্রোগ্রামের সাহায্যে বহুবিধ অপারেশন অর্থাৎ কার্য করতে সক্ষম।
৪. হার্ডওয়্যার হল কম্পিউটারের ভৌত-অংশসমূহ যেগুলিকে স্পর্শ করা যায়।
৫. সফ্টওয়্যার হল একগুচ্ছ নির্দেশাবলী (অর্থাৎ প্রোগ্রাম) যা কম্পিউটারকে বলে দেয় তাকে কি করতে হবে।
৬. অপ্রক্রিয়াকৃত (unprocessed) কাচা (raw) বিষয়বস্তু এবং চিত্রসমূহ হল ডাটা (data)।
৭. প্রক্রিয়াজাত (processed) ডাটা যেগুলি প্রকৃত অর্থ প্রকাশ করতে সক্ষম তাকে বলে তথ্য (information)।
৮. কম্পিউটার সিস্টেমের চারটি মূল উপাদান হল : (i) ইনপুট ইউনিট (ii) CPU (iii) অভ্যন্তরীণ স্মৃতি (internal memory) এবং (iv) আউটপুট ইউনিট।
৯. অপারেটিং সিস্টেমের পার্থক্যের জন্য একই ভাষায় লেখা কোনো প্রোগ্রাম পৃথক কম্পিউটারে পৃথক পৃথক আচরণ করে। এর ফলে যে অসুবিধা সৃষ্টি হয়, কম্পিউটারের পরিভাষায় তাকে ডায়ালেক্ট বলে।
১০. DOS এবং উইন্ডোজ হল অপারেটিং সিস্টেমের অন্যতম উদাহরণ।
১১. কম্পিউটারের তথ্য সঞ্জয়ের ক্ষুদ্রতম একক হল বিট্।।
১২. লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমের উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যাবলী হল : (i) মুক্ত উৎস অর্থাৎ ওপেন সোর্স তথা ফ্রী সফটওয়্যার ও পরিবর্তনযোগ্য (ii) ভাইরাসমুক্ত (iii) স্থিতিশীল ও দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবহারযোগ্য (iv) চারটি ওয়ার্কস্পেসযুক্ত।
আশাকরি আপনি কম্পিউটারের কার্যপ্রণালী বা সিস্টেম সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন। যদি আপনার এখনো কোনো প্রশ্ন থাকে তাহলে কমেন্ট বক্সে জানান। আর এই তথ্যগুলি ভালো লাগলে আপনার পরিবার ও বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। আর এরকম ধরণের নতুন নতুন টিপস পেতে আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলটিতে যোগদান করুন। এছাড়া আরো জানুন কিভাবে ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট তৈরি করবেন তার নিয়ম।