ওয়েবসাইটের বিজ্ঞাপন পদ্ধতি গুলো কি কি? কিভাবে তারা ইনকাম করে
আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় দর্শক, আশা করি আপনি ভালো আছেন? আজকে এই নিবন্ধনে আমি কথা বলব ওয়েবসাইটের বিজ্ঞাপন পদ্ধতি গুলো কি কি বা ওয়েবসাইট এর মালিক বা কোম্পানিগুলো তারা কি কি পদ্ধতিতে বিজ্ঞাপন লাগিয়ে, তাদের ওয়েবসাইট থেকে ইনকাম করে থাকে সেই বিষয়ে।
সুতরাং, আপনি যদি একজন ব্লগার বা ওয়েবসাইট এর মালিক হয়ে থাকেন, এবং ভাবছেন কি কি পদ্ধতিতে আপনার ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন করা যায়। তাহলে এই নিবন্ধনটি সম্পূর্ণ পড়ুন। আশা করি আপনার মনে জাগা প্রশ্নটির উত্তর, আপনি এই নিবন্ধনের মাধ্যমে পেয়ে যাবেন।
ওয়েবসাইটের বিজ্ঞাপন পদ্ধতি গুলো কি কি
সাধারণত, একটি ওয়েবসাইটকে বিভিন্ন উপায়ে বিজ্ঞাপন পদ্ধতি ব্যবহার হয়ে থাকে। তবে তার মধ্য থেকে সব থেকে বেশি যে বিজ্ঞাপন পদ্ধতিটি ব্যবহার হয়ে থাকে, সেগুলো আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরেছি। যেমন;
১. থার্ড পার্টি বিজ্ঞাপন
থার্ড পার্টি বা তৃতীয় পক্ষের বিজ্ঞাপন, বলতে বোঝায় “এডসেন্স, অ্যাডেক্স, এজোয়িক, মিডিয়া-বাইন, এবং media.net” এর মত বিজ্ঞাপন প্রোভাইডার কে বলা হয়। কারণ তারা সরাসরি একটি কোডের মাধ্যমে আপনার ওয়েবসাইটে বিভিন্ন ধরনের, বিভিন্ন কোম্পানির বিজ্ঞাপন গুলো আপনার ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা দর্শকদের দেখিয়ে থাকে। যে বিজ্ঞাপন গুলো সরাসরি কোন ই-কমার্স বা অনলাইন স্টোর কোম্পানিগুলো যায় সমস্ত কোম্পানির মাধ্যমে দিয়ে থাকে।
সেই বিজ্ঞাপন গুলোকে দর্শকদের কাছে তুলে ধরতে তারা তাদের কাছ থেকে অ্যাপপ্রুভ নেওয়া ওয়েবসাইট গুলিতে তারা বিভিন্ন বিজ্ঞাপন দেখিয়ে, সর্বাধিক ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ কমিশন নিয়ে থাকে, এবং বাকি কমিশন গুলো আপনার ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হওয়ার জন্য আপনাকে দিয়ে থাকে। একে বলা হয় থার্ড পার্টি বিজ্ঞাপন। আপনি এই বিজ্ঞাপন পদ্ধতি ব্যবহার করে আপনার ওয়েবসাইট থেকে ইনকাম করতে পারবেন। এই সমস্ত তৃতীয় পক্ষের বিজ্ঞাপন প্রোভাইডার কে ব্যাবহার করে।
২. অন্যের প্রোডাক্ট বিক্রয় করে
অন্যের প্রোডাক্টকে ওয়েবসাইট আয়ের মাদ্ধমে বিক্রয় করানোকে বলা হয় অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। আশা করি আমাদের সকলেরই সেই সম্পর্কে কম বেশি ধারণা আছে, এতে বেশি কিছু বলার নেই।
তবে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং টি হল। কোন একটি কোম্পানি তার নিজস্ব প্রোডাক্ট কে প্রচার করার জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকেন। যেখানে কোন একটি ওয়েবসাইটের মালিক কিংবা কোন ইনফ্লুয়েন্সার তাদের প্রোডাক্ট বা পণ্যকে ব্যবহার করে, তার সম্পর্কে বিবরণ দিয়ে পোস্ট লিখে বা ভিডিও তৈরি করে দর্শকের কাছে প্রচার করে।
সাথে সেই কোম্পানির প্রোডাক্ট কে তাদের দেওয়া অ্যাফিলিয়েট লিংক ব্যবহার করিয়ে, প্রোডাক্টটি দশকের কাছে বিক্রয় করে থাকে। ফলে তার বদলে ওই প্রোডাক্টের মূল্যর থেকে কিছু শতাংশ কমিশনে ওই ইনফ্লুয়েঞ্জার বা ওয়েবসাইট এর মালিক পেয়ে থাকে। একে বলে অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। আপনি এই সম্পর্কে সম্পূর্ণ জানতে এখানে দেওয়া লিংকে ক্লিক করুন।
আপনার ওয়েবসাইটে তৃতীয় পক্ষের বিজ্ঞাপন ছাড়া, এই অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং এর মাধ্যমে ইনকাম করতে পারবেন। আপনার ওয়েবসাইটে বিভিন্ন কোম্পানির প্রোডাক্ট কে প্রচার করে তাদের অ্যাফিলিয়েট লিংক যুক্ত করে।
৩. অ্যাড এর জায়গা বিক্রয় করে
আপনার ওয়েবসাইটটি যদি কোন একটি নির্দিষ্ট ক্যাটাগরির উপরে হয়ে থাকে। তাহলে আপনি আপনার ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপন লাগানোর জায়গা গুলো বিভিন্ন কোম্পানির কাছে বিক্রয় করতে পারেন।
এর জন্য আপনি “বিটভাটাইজার” কিংবা “ওয়েবসাইট বিজ্ঞাপন বিডি” সাইটে যুক্ত করতে পারেন।
যেখানে বিভিন্ন কোম্পানি তাদের প্রোডাক্ট কে সরাসরি কোন একটি ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রচার করার জন্য এড এর জায়গা খোঁজ করে থাকেন।
সুতরাং, আপনার ওয়েবসাইটটি যেকোনো ক্যাটাগরী হোক না কেন, আপনি সেই ক্যাটাগরির কোম্পানির বিজ্ঞাপনকে আপনার ওয়েবসাইটে লাগাবার জন্য যে জায়গাটি থাকে সেই জায়গাটি তাদের কাছে বিক্রয় করতে পারেন। আপনার নিজেস্ব নিধারণ করা মূল্যের উপর।
যেটি বেশিরভাগ টেকনোলজি, ফ্যাশন, ও হেলথ বা স্বাস্থ্য ক্যাটাগরি ওয়েবসাইট গুলোতে হয়ে থাকে। তাই আপনিও চাইলে আপনার ওয়েবসাইট থেকে ইনকাম করার জন্য এই পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন।
৪. নিজস্ব প্রোডাক্ট বিক্রয় করে
আপনি যদি একজন ব্লগার বা ওয়েবসাইটের মালিক হয়ে থাকেন। তাহলে আপনি নিজস্ব ডিজিটাল বা ফিজিক্যাল প্রোডাক্ট তৈরি করতে পারেন। তারপর আপনি আপনার ওয়েবসাইটে সেই ডিজিটাল বা ফিজিক্যাল প্রোডাক্টটি আপনার দর্শকদের কাছে বিক্রয় করতে পারেন।
যেমন; উদাহরণস্বরূপ আপনি যে বিষয়ে ওয়েবসাইটটি তৈরি করেছেন এবং যে বিষয়ে আপনি ওয়েবসাইটের কন্টেন্ট বা নিবন্ধন পাবলিশ করেন। সেই বিষয়ের উপরে গভীরভাবে একটি অনলাইন পিডিএফ কোর্স বা ভিডিও কোর্স তৈরি করে সেটিকে আপনার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বিক্রয় করাতে পারেন।
কিংবা আপনার যদি অনলাইন “ওয়েবসাইট তৈরি, এসইও” কিংবা আরো অন্যান্য যে কাজগুলো আছে সে কাজগুলো করতে পারেন থাকেন। তাহলে সেগুলোর পরিষেবা বিক্রয় করাতে পারেন, আপনার দর্শকদের কাছে। তাহলে দেখবেন আপনার যে দর্শকের ওয়েবসাইট বানানোর প্রয়োজন হবে। তারা আপনার সাথে যোগাযোগ করবে।
এছাড়া আপনি বিভিন্ন ধরনের ফিজিক্যাল প্রোডাক্ট। যেমন; গেঞ্জি, চায়ের কাপ, কিংবা আরো অন্যান্য যে প্রোডাক্টগুলো হয়ে থাকে। আপনি সেটি আপনার ওয়েবসাইট এর ক্যাটাগরি অনুযায়ী, ম্যাচ করে সেরকম ধরনের প্রোডাক্ট তৈরি করে আপনার দর্শকের কাছে বিক্রয় করে ইনকাম করতে পারবেন।
৫. ওয়েবসাইটে মেম্বারশিপ তৈরি করে
আমরা সকলেই জানি, সমস্ত ওয়েব সাইটের কনটেন্ট বা নিবন্ধন গুলো পড়তে গেলে আমরা ফ্রিতে পড়তে পারি। কিন্তু এমন ও কিছু কিছু প্রিমিয়াম ওয়েবসাইট আছে। যেগুলোতে তারা ভীষণ ভ্যালুবাল বা দর্শকদের খুবই প্রয়োজনীয় যুক্ত কনটেন্ট বা নিবন্ধন পাবলিশ করে থাকেন।
ফলে দর্শকরা তাদের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে সেই কন্টেন বা নিবন্ধনগুলো পড়তে, দর্শকের ভালো লাগে বা তাদের সেই কনটেন্টকে পড়তে বাধ্য করে।
এমন ধরনের ওয়েবসাইট গুলি হলো। যেখানে অনলাইন টেকনোলজি সম্পর্কে জ্ঞান দিয়ে থাকে, সেরকম ক্যাটাগরির ওয়েবসাইট গুলিতে। আপনি মেম্বারশিপ প্লান চালু করতে পারেন।
ফলে যখনই আপনার দর্শক আপনার ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে কনটেন্ট পড়তে চাইবে। তাকে আগে টাকা দিয়ে সেই প্রিমিয়াম মেম্বারশিপ প্লান করায় করতে হবে। তারপর সেই দর্শকটি আপনার সেই নিবন্ধনটি পড়তে পারবে। সুতরাং আপনার ওয়েবসাইটে উপলব্ধ কনটেন্ট গুলো পড়বার জন্য যত বেশি দর্শক মেম্বারশিপ ক্রয় করবে, আপনি তত বেশি ইনকাম করতে পারবেন।
৬. স্পন্সর কনটেন্ট বা নিবন্ধন লিখে
আপনার ওয়েবসাইট টি যদি কোন একটি বিশেষ ক্যাটাগরির উপরে হয়ে থাকে। তাহলে সেক্ষেত্রে সেই ক্যাটাগরির বিভিন্ন কোম্পানিগুলো তাদের প্রোডাক্টকে ব্যবহার করে দর্শকদের কাছে সঠিক রিভিউ দিয়ে প্রচার করানোর জন্য, তাদের কনটেন্টকে আপনার ব্লগে পাবলিশ করার অনুমতি নিয়ে থাকে।
কিংবা আপনার কাছে সেই স্পন্সর কনটেন্ট বা নিবন্ধনটি দিয়ে থাকে। যেটাকে আপনার ওয়েবসাইটে পাবলিশ করার জন্য অনুরোধ করে থাকে। এবং তারা তার বদলে আপনার ওয়েবসাইটের অথরিটি ও দর্শকের উপর ভিত্তি করে টাকা দিয়ে থাকে। সুতরাং আপনি এই পদ্ধতি টি অবলম্বন করেও আপনার ওয়েবসাইট থেকে ইনকাম করতে পারবেন।
৭. ডোনেশন নিয়ে ইনকাম
আপনি যদি আপনার ওয়েবসাইটে উপরে দেওয়া এই সমস্ত পদ্ধতি গুলো অবলম্বন না করতে পারেন। তাহলে আপনি এই ডোনেশন পদ্ধতিটি অবলম্বন করতে পারেন।
যেখানে আপনি আপনার ওয়েবসাইটে Google pay, ও Phonepe এর মত application এর কিউআর কোড এবং নাম্বার দিয়ে একটি ভালো ডোনেশন ব্যানার তৈরি করে। সেটিকে আপনার ওয়েবসাইট বিজ্ঞাপন এর মাধ্যমে লাগাতে পারেন। এবং আপনার দর্শকদেরকে আপনার ওয়েবসাইটে পাবলিশ করা নিবন্ধনগুলো পড়ে ভালো লাগলে ডোনেশন করতে বলতে পারেন।
ফলে আপনার ওয়েবসাইটে যত বেশি দর্শক থাকবে। তারা আপনার ডোনেশন করবে। আপনি ততো বেশি ইনকাম করতে পারবেন।
তবে এই ডোনেশন নেওয়ার জন্য আপনাকে খুব মেহনত করে কাজ করতে হবে। এবং আপনার ওয়েবসাইটে আসা দর্শকদেরকে সুন্দর ও প্রয়োজনীয় কন্টেন পাবলিশ করে, তাদেরকে আকর্শিত করতে হবে এবং উৎসাহিত করতে হবে।
৮. ওয়েবসাইটকে প্রচার করে ইনকাম
আপনি যদি আপনার ওয়েবসাইটে উপরে দেওয়া এই সমস্ত বিজ্ঞাপন পদ্ধতি গুলি ব্যবহার করে থাকেন। এবং সেখান থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ইনকাম না করতে পেরে থাকেন।
তাহলে আপনি আপনার ওয়েবসাইট টিকে “গুগল, বিং, ইয়াহু, ইজোয়িক, মিডিয়া-বাইন” ও আরো অন্য তৃতীয় পক্ষের বিজ্ঞাপন নেটওয়ার্ক গুলোর সাথে যুক্ত হয়ে। আপনার ওয়েবসাইট টিতে বিজ্ঞাপন প্রচার করাতে পারেন।
ফলে আপনার ওয়েবসাইটে আসা দর্শকগুলো। যখন আপনার ওয়েবসাইটে থাকা নিবন্ধনগুলো পড়বে এবং সেখান থেকে বিজ্ঞাপন দেখবে, অ্যাফিলিয়েট পণ্য ক্রয় করবে, ও আরো অন্যান্য এক্টিভিটি গুলো করবে। তখন আপনি সেখান থেকে অধিক পরিমাণে টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
তবে এই পদ্ধতিটি বেশিরভাগ “প্রো” বা “বড় বড়” ওয়েবসাইট গুলো ব্যবহার করে থাকেন। কারণ এটা করতে গেলে টাকা ও অভিজ্ঞতার প্রয়জন হয়ে থাকে, তাই আপনিও চাইলে এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করতে পারেন।
এছাড়া আরো অনেক পদ্ধতি আছে, তবে সেগুলো ব্যবহার করার জন্য বা প্রয়োগ করার জন্য। আপনাকে ওয়েবসাইট সম্পর্কে অনেক জ্ঞান অর্জন করতে হবে। সুতরাং আপনি যদি সেগুলো জানতে চান তাহলে আমাদের ওয়েবসাইটটিকে নিয়মিত অনুসরণ করুন এবং নিচে কমেন্ট বক্সে জানান।
শেষ কথা:
আমি আশা করি আপনি “ওয়েবসাইটের বিজ্ঞাপন পদ্ধতি গুলো কি কি” ও “কিভাবে ওয়েবসাইটগুলো তাদের ওয়েবসাইট থেকে ইনকাম করে থাকে।” এই বিষয়ে সম্পূর্ণ ধারণা পেয়ে গিয়েছেন। যদি পেয়ে থাকেন, তাহলে এটি বেশি বেশি শেয়ার করে দিন। আর এরকম ধরনের আরো নতুন নতুন টিপস পেতে আমাদের টেলিগ্রাম চ্যানেলটিতে যোগদান করে, আমাদের সাথে জুড়ে থাকুন। আর অবশ্যই আপনার মতামত কমেন্টে বক্সে জানান। ধন্যবাদ।