ইনকিলাব শব্দের অর্থ কী? আমার ব্যক্তিগত উপলব্ধির কথা
ইনকিলাব” শব্দের অর্থ হলো “বিপ্লব“
আমার শৈশব কেটেছে এমন এক পরিবেশে, যেখানে রাজনীতি আর সমাজ পরিবর্তনের আলোচনা ছিল নিত্যদিনের সঙ্গী। চারপাশে দেখেছি মিছিল, স্লোগান আর দেয়ালে লেখা নানা কথা। এর মধ্যে একটি শব্দ বার বার কানে আসত, আর সেটি আমার কৌতূহলকে আরো উসকে দিত সেটি হলো – “ইনকিলাব“।
এই শব্দটি শুনতে ভারী, তবে তার একটা নিজস্ব গম্ভীর আওয়াজ আছে। প্রথম প্রথম ভাবতাম, এটা হয়তো কোনো বিদেশি নাম বা একটা বিশেষ মন্ত্রের মতো। কিন্তু আমি যখন বড় হলাম এবং শব্দটির আসল অর্থ জানতে পারলাম, তখন বুঝলাম কেন এই “ইনকিলাব” শব্দটি এত শক্তি ধরে।
ইনকিলাব শব্দের অভিধানগত অর্থ:
সাধারণত আমরা জানি, “ইনকিলাব” (উর্দু/আরবি: انقلاب) শব্দের অর্থ হলো বিপ্লব বা আমূল পরিবর্তন (Revolution or Fundamental Change)। এটি একটি আরবি শব্দ, যা ফারসি ও উর্দু হয়ে বাংলাতে প্রবেশ করেছে। আর যখন এর সাথে “জিন্দাবাদ” (দীর্ঘজীবী হোক) শব্দটি যুক্ত হয়, তখন তৈরি হয় বিখ্যাত স্লোগান, যেটি হলো “ইনকিলাব জিন্দাবাদ” যার অর্থ: “বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক“। এই শব্দটি আমরা বিভিন্ন সময় ব্যাবহার হতে দেখি।
আমার অভিজ্ঞতায় ইনকিলাব:
তবে, আমার কাছে “ইনকিলাব” শব্দটি কেবল একটি অভিধানের সংজ্ঞায় সীমাবদ্ধ হিসাবে থাকেনি। আমি এই শব্দটিকে দেখেছি নানা রূপে, নানা প্রসঙ্গে:
ইতিহাসের পাতায়:
আপনি যখন প্রথম ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস পড়ি, তখন ভগৎ সিং এবং তাঁর সাথীদের কথা জানতে পারি। যেখানে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে তাঁদের বজ্রকঠিন আওয়াজ ছিল এই “ইনকিলাব জিন্দাবাদ“। সেই সময় আমার মনে হয়েছিল, এই শব্দটি শুধু কোনো রাজনৈতিক পরিবর্তনের ডাক ছিল না, এটি ছিল লক্ষ লক্ষ মানুষের বুকে জমে থাকা ক্ষোভ, আশা এবং নতুন ভোরের আকাঙ্ক্ষার সম্মিলিত বিস্ফোরণ। এটি শুধু নিয়ম ভাঙার ডাক নয়, বরং একটি নতুন, ন্যায্য সমাজ গড়ার শপথ।
জানুন: গুগল আমার নাম কি?
প্রতিদিনের ছোট ছোট পরিবর্তন:
আমি একসময় ভাবতাম, বিপ্লব মানেই বুঝি বিরাট কোনো রক্তক্ষয়ী ঘটনা। কিন্তু ধীরে ধীরে বুঝলাম, “ইনকিলাব” শুধু সরকার বা শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। আমার ব্যক্তিগত জীবনেও এই শব্দের অনেক প্রভাব আছে। কারণ যখন কোনো পুরোনো, ক্ষতিকর অভ্যাস ভেঙে আমি নতুন কিছু শুরু করি তখন সেটা আমার ভেতরের ‘ইনকিলাব’। যখন সমাজে সেটি একটি ছোট ভুল ধারণার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলে, তখন
- চিন্তায় পরিবর্তন: গোঁড়ামি বা অন্ধবিশ্বাস থেকে মুক্ত হয়ে যুক্তিবাদী হওয়া।
- দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন: পুরাতনকে আঁকড়ে না থেকে নতুনকে সাদরে গ্রহণ করা।
- নিজের ভেতরের বিদ্রোহ: অন্যায়ের কাছে মাথা নত না করে প্রতিবাদ করা।
শিল্প ও সাহিত্যে এক প্রেরণা
আমি দেখেছি, কীভাবে কবি, সাহিত্যিক এবং শিল্পীরা তাদের সৃষ্টির মাধ্যমে সমাজের স্থবিরতা ভেঙে নতুন চিন্তার বীজ বুনে দেন। তাঁদের কলম বা তুলির আঁচড়ও এক ধরনের নীরবে ‘ইনকিলাব’ ঘটায়। যেটি তাকে প্রশ্ন করতে শেখান, স্বপ্ন দেখতে শেখান।
তাই আমার কাছে “ইনকিলাব” একটি চলমান প্রক্রিয়া, যা থেমে থাকে না। এটি কেবল অতীতের একটি স্লোগান নয়, এটি বর্তমানের চ্যালেঞ্জ এবং ভবিষ্যতের আশা। যখনই কোনো অন্যায় বা বৈষম্য দেখি, তখনই যেন মনের মধ্যে এই শব্দটি প্রতিধ্বনিত হয় যেটি “পরিবর্তন দরকার, এখন পরিবর্তন দরকার”।
তাই, আমার নিজস্ব অভিজ্ঞতার আলোকে, “ইনকিলাব” কেবল “বিপ্লব” নয়; এটি হলো সঠিকের জন্য আমূল পরিবর্তন, ন্যায়ের জন্য বিদ্রোহ, এবং প্রগতির জন্য নিরন্তর প্রচেষ্টা। তাই আমি মনে করি যতদিন পৃথিবীতে অন্যায় থাকবে, ততদিন “ইনকিলাব“-এর প্রয়োজন থাকবে।